‘আমি ভয় করব না, ভয় করব না
দু বেলা মরার আগে মরব না, ভাই, মরব না...’
ভয় পেয়ে থেমে যেতে মালতিরা শেখেনি। তাই হাজার যন্ত্রণা, ধিক্কার, মানুষের তাচ্ছিল্য, উপেক্ষা সহ্য করেও সমাজের মূল স্রোতের সঙ্গে গা ভাসিয়ে সদর্পে, মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে প্রতি মুহূর্তে লড়াই করে যাচ্ছেন তাঁরা। তাঁরই ছোট্ট একটা উদাহরণ ‘অরেঞ্জ ক্যাফে’। এই ক্যাফে চালান মূলত অ্যাসিড আক্রান্ত মহিলারা। তাই আর পাঁচটা ক্যাফের থেকে এটি একটু আলাদা তো বটেই। এর আগে এই ক্যাফে খোলা হয়েছে আগ্রা, লখনউয়ে। এবার এই ক্যাফের একটি শাখা খোলা হতে চলেছে যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে।
‘অরেঞ্জ ক্যাফে’র প্রতিষ্ঠাতা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘রেড ব্রিগেড’-এর কর্ণধার অজয়কুমার পটেল। তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত এই উদ্যোগ। ‘রেড ব্রিগেড’-এর পথ চলা শুরু হয় ২০১১ সালে। এই সংস্থার প্রধান কাজই ছিল মহিলাদের আত্মরক্ষার পাঠ দেওয়া। তারপর অ্যাসিড আক্রান্ত মহিলাদের নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন অজয়রা।
আগ্রা, লখনউয়ের পর বারাণসীতে চার অ্যাসিড আক্রান্ত মহিলাকে এবার এই ক্যাফের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ‘রেড ব্রিগেড’-এর কর্ণধার অজয়কুমার পটেল জানিয়েছেন যে, বারাণসীর দুর্গ কুণ্ড এলাকায় নতুন এই ক্যাফেটি তৈরি হয়েছে একটি ভাড়াবাড়িতে। তবে পরে সেটি কিনে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। চারজন মহিলাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এই ক্যাফে চালানোর। প্রথম চার মাস তাঁদের মাসিক অল্প কিছু টাকা দেওয়া হবে। তারপর এই ক্যাফের লাভের টাকা এই মহিলারা নিজেরাই ভাগ করে নেবেন। পাশাপাশি তাঁদের হাতেই ছেড়ে দেওয়া হবে ক্যাফের যাবতীয় দায়িত্ব।
গত দু’বছর ধরে উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ‘রেড ব্রিগেড’-এর কর্ণধার অ্যাসিড আক্রান্ত মহিলাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এর মধ্যে জৌনপুর থেকে রেখা, বরেলি থেকে সোমবতী, রায়বরেলি থেকে বিমলা এবং বারাণসীর বাদামদেবী-নামে চারজনকে নির্বাচন করা হয়েছে। তাঁরাই এই রেস্তারাঁ চালাবেন বলে জানা যাচ্ছে। এই মুহূর্তে এই চারজন মহিলাকে রান্না, পরিবেশন এবং ক্যাশ কাউন্টার সামলানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ‘ছপাক’ ছবিতে ‘মালতি’ চরিত্রে অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোনের অভিনয় আরও বেশি করে বাস্তবের অ্যাসিড আক্রান্ত মালতিদের লড়াইয়ের কাহিনিকে সামনে আনছে। এই চার মালতিও সেই নৌকার সহযাত্রী। তাঁরা নতুন করে বাঁচার স্বাদ আস্বাদন করতে চাইছে। তাঁদের জীবনযুদ্ধে এক নতুন মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে। এই চারজনেরই একজন জানিয়েছেন, তাঁরা আশাবাদী, এই ভেবে যে এবার তাঁরা অর্থনৈতিকভাবে আত্মনির্ভর হতে পারবে।