বিশ্বনাথের মন্দিরে মহাদেব 'বিশ্বেশ্বর'

সারা দেশে শিবের মোট ১২ টি জ্যোর্তিলিঙ্গ রয়েছে। বিশ্বনাথের মন্দিরই দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে প্রথম লিঙ্গ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি তীর্থস্থান। এই মন্দিরে 'বিশ্বেশ্বর' রূপে পূজিত হন মহাদেব। স্কন্দ পুরাণের কাশীখন্ডে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের উল্লেখ ছিল। ঐতিহাসিকদের ধারণা, আকবরের সভার অন্যতম রত্ন রাজা টোডরমল এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

প্রচলিত কাহিনি অনুযায়ী, একবার কে শ্রেষ্ঠ এই নিয়ে ব্রহ্মা ও বিষ্ণুর মধ্যে প্রবল কলহ হয়। তখন দুই দেবকে থামাতে স্বয়ং মহাদেব আলোর শিখায় স্বর্গ, মর্ত্য এবং পৃথিবীকে বিদ্ধ করেছিলেন। সেই আলোর শিখা থেকেই এই জ্যোতির্লিঙ্গের সৃষ্টি। এই জ্যোতির্লিঙ্গের সৃষ্টি করে মহাদেব প্রমাণ করে দেন তিনিই সেরা, তিনি দেবাদিদেব। সকল দেবতার শ্রেষ্ঠ।

একাদশ শতাব্দীতে হরি চন্দ্র মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেছিলেন ১১৯৪ সালে মহম্মদ ঘোরি কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরটি ধ্বংস করেছিলেন। তারপর আবার পুনঃনির্মাণ করা হয় এই মন্দির। কুতুবুদ্দিন আইবক মন্দিরটি ধ্বংস করেছিল। সেই বারও পুনঃনির্মাণ করা হয়েছিল। ঔরঙ্গজেবের আদেশেও মন্দিরটি ধ্বংস করা হয়েছিল।

 

KashiBishwanath1

 

তবে ১৭৮০ সালে ইন্দোরের মহারাণি অহিল্যাবাই হোলকর বিশ্বনাথ মন্দির আবার তৈরি করে দেন। ১৮৩৫ সালে মহারাজা রঞ্জিত সিং কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের চূড়াটি ১৫.৫ মিটার উঁচু প্রায় ১০০০ কিলোগ্ৰাম সোনায় মুড়ে দিয়েছিলেন। তাই মন্দিরটিকে স্বর্ণমন্দিরও বলা হয়। মন্দিরের গর্ভগৃহে রয়েছে শিবলিঙ্গটি। মন্দিরের উত্তর দিকে রয়েছে একটি পাতকুয়ো। এই কুয়ো জ্ঞানব্যাপী নামে পরিচিত।

হিন্দু ধর্মের জনপ্রিয় নেতা আদি শঙ্করাচার্য, রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব, স্বামী বিবেকানন্দ, স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী ছাড়াও অনেকে দর্শন করেছে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির।

হিন্দু বিশ্বাস, মহাদেব সতীর দেহত্যাগের পর শিব মণিকর্ণিকা ঘাট দিয়ে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে এসেছিলেন। কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের কাছে অবস্থিত এই মণিকর্ণিকাঘাট। উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বারাণাসী শহরে গঙ্গার পশ্চিম তীরে অবস্থিত মন্দিরটি। তবে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের জন্যেই বারাণসী কাশী নামে পরিচিত।

বছরের বিভিন্ন সময়ে ভক্তদের আগমন হয় এই মন্দিরে। হিন্দুদের বিশ্বাস, গঙ্গায় ডুব দিয়ে মন্দির দর্শন করলে পুণ্য লাভ করা যায়। কাশীতে মৃত্যু হলে এই জন্ম মৃত্যুর বৃত্তাকার চক্র থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলে মনে করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। এখানে যাঁর মৃত্যু হয়, স্বয়ং মহাদেব তাঁর কানে তারক মন্ত্র দেন বলে প্রচলিত বিশ্বাস।

ভক্তরা বিমান,রেল ও সড়ক পথে তিন ভাবেই আসতে পারেন কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে। বারাণসী থেকে বিমানবন্দরের দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার। বারাণসী রেলস্টেশন ও মোঘল সারাই জংশনের দূরত্ব বেশি নয়। এছাড়াও সড়ক পথে দিল্লি, নাগপুর, পাটনা, কানপুর, এলাহাবাদ থেকে বাসের ব্যবস্থা রয়েছে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...