বাংলা নাট্য জগৎ এবং অবশ্যই তার অন্যতম নক্ষত্র শিশির কুমার ভাদুড়ী। আজ যে নাটক আমরা দেখি তা শিশির ভাদুড়ী না থাকলে কখনও দেখা হত না। শিশির কুমার ভাদুড়ী ১৮৮৯ সালের ২ রা অক্টোবর হাওড়া জেলার রামরাজাতলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গবাসী স্কুল থেকে এন্ট্রাস পাশ করেন তিনি। ১৯১০ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বি এ পাশ করেন। এরপর ১৯১৩ সালে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন। তিনি প্রথমে মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন ও বিদ্যাসাগর কলেজে অধ্যাপনা করেন। ছাত্রবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল। অধ্যাপনা করাকালীন নিজস্ব শখ হিসেবে কয়েকটি ইংরেজি ও বাংলা নাটকে অভিনয় করেন তিনি। ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট মঞ্চ ছিল তাঁর প্রথম অভিনয় করার স্থান। ১৯২১ সালে তিনি ম্যাডান থিয়েটারে পেশাদার অভিনেতা রূপে নিযুক্ত হন। এরপর তিনি আলমগীর নাটকে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তারপর বিভিন্ন মতানৈক্যের কারণে ম্যাডন থিয়েটার ছেড়ে দেন। পবর্তীকালে তিনি বেশ কিছুদিন মঞ্চ ছেড়ে চলচ্চিত্রে যুক্ত হন।
১৯২৩ সালে তিনি আবার নাট্যরঙ্গ মঞ্চে পদার্পন করেন। এবং একই সঙ্গে তিনি একটি নাট্যদল ও গঠন করেন। এরপর দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সীতা নাটকে রামচন্দ্রের অভিনয় করেন তিনি। এই নাটকে তিনি অভিনয়ের জন্য খ্যাতি ও লাভ করেন। তাঁর এই অভিনয় দেখে অমৃতলাল বসু তাঁকে থিয়েটারের নবযুগের প্রবর্তক রূপে ঘোষণা করেন। তাঁর অভিনীত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র হল, ১৯২৬ সালে বিসর্জন নাটকে রঘুপতি ও জয়সিংহ চরিত্রে, ১৯২৭ সালে প্ৰফুল্লি নাটকে যোগেশ চরিত্রে, ১৯২৭ সালে ষোড়শী নাটকে জীবানানন্দ চরিত্রে, ১৯২৮ সালের দিগ্বিজয়ী নাটকে নাদির শাহ চরিত্রে, ১৯২৮ সালে সধবার একাদশী নাটকে নিমচাঁদ চরিত্রে, ১৯২৯ সালে চিরকুমার সভা নাটকে চন্দ্রবাবু চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৩০ সালে তিনি স্টার থিয়েটারে যোগ দেন। ১৯৩০ সালে শিশির কুমার তার নিজস্ব নাট্যগোষ্ঠী নিয়ে যান আমেরিকাতে। এর থেকে ঠিক এক বছর পর নিউইয়র্কের ভ্যানটারবিল্ট থিয়েটারে সীতা নাটকটি মঞ্চস্থ করা হয়। এবং সেখানে নাটকটি বিপুল ভাবে খ্যাতি লাভ করে। ১৯৪২ সালে তিনি শ্রীরঙ্গম নামে একটি রঙ্গমঞ্চ প্রতিষ্টা করেন। বর্তমানে যা বিশ্বরূপা থিয়েটার নামে পরিচিত। এই মঞ্চে তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নাটক হল বিপ্রদাস, দুঃখীর ইমান, বিন্দুর ছেলে। শ্রীরঙ্গমেই তিনি তাঁর জীবনের সর্বশেষ অভিনয় করেন। ১৯৫৯ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মভূষণে ভূষিত করতে চাইলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। বরং তাঁর আশা ছিল জাতীয় নাট্যশালা প্রতিষ্ঠা করার। ১৯৫৯ সালের ৩০ জুন তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এ যেন এক পর্বের অবসান ঘটল।