আবার একটি সবুজ করিডোর তৈরী হল শহরে। বনগাঁর গোপালনগরের বাসিন্দা বিধান অধিকারী দেড় বছর ধরে 'সিরোসিস অফ লিভার' রোগে ভুগছিলেন। অন্যদিকে আট বছর ধরে হার্টের ভালভের সমস্যায় ভুগছিলেন ২৫ বছরের সুরজিৎ। শ্বাস নিতে পারছিলেন না। পাশাপাশি বর্ধমানের চিন্ময় ঘোষের বাড়ি মেমরিতে। ওষুধের দোকানে কাজ করতেন তিনি। গত বুধবার রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে তাঁর স্কুটির সঙ্গে একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে তার ফলে তিনি মারাত্মক জখম হন। তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে কলকাতার পার্ক ক্লিনিকে নিয়ে আসা হয়।
সোমবার দুপুরে ডাক্তারেরা তাঁর ব্রেন ডেথ ঘোষণা করে। এর পরেই অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নেয় তার পরিবার। গতকাল রাতেই হার্ভেস্টিং (অঙ্গগ্রহনের প্রক্রিয়া) শুরু হয়। চিন্ময়ের এক আত্মীয়ের কাছ থেকে জানা যায়, তাঁর বাড়িতে বৃদ্ধা মা, স্ত্রী এবং একটি ১১ বছরের ছেলে আছে। চিন্ময়ের ব্রেন ডেথ হওয়ার আগেই তাঁর বাড়ির লোক অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নেন। তারপর স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে কথা বলা হয়। ওখানকার প্রতিনিধিরা এসে দেখে যাওয়ার পর এবং নিয়মকানুন সব মিটে যাওয়ার পর অঙ্গ নেওয়ার কাজ শুরু হয়ে যায়। ওই আত্মীয় আরও জানান, প্রথমে একটু দ্বন্দ্ব ছিল চিন্ময়ের স্ত্রী এবং দাদা রাজি হবেন কি না তাই নিয়ে। কিন্তু ওঁরা রাজি হয়ে যাওয়ায় গোটা প্রক্রিয়াটাই মসৃণভাবে এগিয়েছে।
চিন্ময়ের লিভার প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে এস এস কে এম-এ ভর্তি বিধান অধিকারীর দেহে। হার্ট প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি সুরজিৎ পাত্রের দেহে। একটি কিডনি এসএসকেএম-এ এবং অপর কিডনি অ্যাপোলোতে প্রতিস্থাপন করা হবে। চোখের কর্ণিয়া পাচ্ছে দিশা আই হাসপাতাল। ত্বক রাখা থাকবে এসএসকেএম-এ। এভাবেই বিভিন্ন মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন চিন্ময়। আমাদের মধ্যে যেভাবে অঙ্গদানের সচেতনতা বাড়ছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, এভাবেই চলতে থাকলে বহু রোগী নতুন জীবন ফিরে পাবেন।