সময়টা ১৮৩৩ , ডালহৌসি চত্বরে বিশাল গথিক শিল্পরীতি বিশিষ্ট ইমারতগুলির পাশে জায়গা করে নিলো ইতালীয় ধাঁচে তৈরী এক বাড়ি । সম্প্রতি এই বাড়ির ভোল গেছে বদলে , এক্কেবারে ঝকঝকে সাদা রং। দেখলে মনেই হবে না এই কিছুদিন আগেও তা পরিত্যক্ত অবস্থায় শেওলা মেখে মলিন হয়ে ছিল। কিন্তু এই বাড়ি নিয়ে এতো বক্তব্যের কারণ কি ? কারণ হলো এই বাড়ি ছিল একসময়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অফিস। কিন্তু শুরু থেকে তা ছিল না । এই নিয়ে আজ তথ্য দেব।
প্রথমে এই বাড়িতে ছিল আগ্রা ব্যাঙ্ক , তারপর তাতে যুক্ত হয় মাস্টার্স ব্যাঙ্কিং কনসার্ন। কিন্তু তা খুব একটা লাভজনক না হওয়ায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তা বিক্রীর পরিকল্পনা করতে থাকে। ইতিমধ্যেই সরকারের প্রয়োজন পড়ে একটি মুদ্রাভবনের।
ব্যাঙ্ক পরিচালকেরা বাড়িটি সেই সুযোগে বিক্রি করে দেন সরকারের কাছে। ব্যাস , ঘটা করে সূচনা হলো মুদ্রা ভবনের। একতলায় ছাপা হতো সরকারি কাগজের নোট। এমন সুরুক্ষিত ভাবে তৈরী হয়েছিল প্রবেশপথ যে সেখানে ছিল এক বিশাল লোহার দরজা, যাতে সহজে মরচে পড়ে না।
তিনটি ভাগে বিভক্ত কারুকাজময় বিশাল সেই সদর দরজা। এতো সুউচ্চ বাড়ি ভাবতে অবাক লাগে তার সেন্ট্রাল হলে তিনটি গম্বুজের ভিতর দিয়ে সকালের রোদ এসে পৌঁছাত। ছাদে বসানো ছিল ভেনিস উইন্ডোজ। ঘরের মেঝে ছিল ইতালীয় মার্বল নির্মিত ।
সুবিশাল উঁচু ছাদ । এই প্রাচীন বাড়িটির নিচ দিয়ে সরাসরি আসা যাওয়া করত হুগলি নদী। প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে বিষয়টা বিস্ময়ের বটে। এই বাড়িটিই ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত ছিল রিজার্ভ ব্যাংকের অফিস।
পরে বেশ বহুদিন অনাদরে , অব্যবহৃত থাকায় কিছুটা অংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু সংস্কৃতি মন্ত্রকের হস্তক্ষেপে এই বাড়ির পুরো পুনর্নির্মাণ এবং সংস্কার করা হয়েছে। বি.বি.দী বাগ বা ডালহৌসি অঞ্চলে অবস্থিত এই ভবনটি এখনও ব্যাংক হিসাবে দেশের প্রাচীনতম বিল্ডিংগুলির মধ্যে একটি।
এটি ২০০২ ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ সমীক্ষা (এএসআই) এটিকে হেরিটেজ বিল্ডিং ঘোষণা করে তার পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হন। ফল , আজ নবরূপে এই ভবনের প্রকাশ। তবে বিমুদ্রাকরণের যুগে এখানে আজ আর মুদ্রা প্রস্তুত হয় না। বিভিন্ন শিল্পের প্রদর্শনী হয়। অবনঠাকুর থেকে বর্তমান যোগেন চৌধুরী কে নেই এখানে !
এই সংগ্রহশালার নাম রাখা হয়েছে ঘরে -বাইরে , প্রাধান্য পেয়েছে ১৮ - থেকে ২০ শতকের বঙ্গশিল্প । এই ২০০ বছরের পুরোনো ইতিহাস ও শিল্পের সম্ভারের স্মৃতি ঝালিয়ে নিতে ঘুরে আসতেই পারেন কেন্দ্রীয় সরকারের মিনিস্ট্রি অফ কালচারের তত্ত্বাবধানে পুনর্নির্মিত নবরূপী এই সংগ্রহশালায় , যা সোমবার ছাড়া বাকি দিনগুলো সকাল ১১ থেকে সন্ধ্যে ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ক্যামেরা নিয়ে যেতেই পারেন , প্রবেশমূল্য নেই।শিল্পকলার এমন চমৎকার উপস্থাপনা সত্যি অবর্ণনীয়।