গুয়ের্নিকার শিল্পী মেতে থাকতেন ষাঁড়ের লড়াই নিয়ে

উত্তর স্পেনের শহরতলি । চারদিকে যুদ্ধের আবহ। স্পেনের গৃহ যুদ্ধে অশান্ত পরিবেশ। জার্মানি বোমা ফেলেছে ছোট্ট শহরটার ওপর। অনিশ্চয়তা, অস্থিরতায় থমথম করছে চারপাশ। একটা ছোট্ট ঘরে এঁকে চলেছেন ছবি। যুদ্ধের ছবি। ক্যানভাস জুড়ে যুদ্ধের ভয়াবহতা। ধংস আর হাহাকার উঠে আসছে তুলির প্রতিটা টানে।

একদিন এক নাৎসি সেনা অফিসার এলেন তাঁর স্টুডিয়োতে। স্তুপাকার রং-তুলি ক্যানভাসের মাঝে দাঁড়িয়ে  সাড়ে ৩ মিটার লম্বা ও প্রায় ৮ মিটার চওড়া তেল রঙে আঁকা একটি ক্যানভাস দেখে শিল্পীকে প্রশ্ন, এটা কি আপনার কাজ?

শান্ত স্থির গলায় শিল্পী উত্তর দিলেন, বলেনা, এটা আপনাদের কাজ।”

সেনা বাহিনী শেষ করতে পারেনি ক্যানভাসটিকে। শিল্পীও বেঁচে গিয়েছিলেন সেই যাত্রা।

৯৩৭ সালে স্পেনের গৃহযুদ্ধের সময়ে গুয়ের্নিকা গ্রামে ঘটে যাওয়া বোমা হামলার আতঙ্ককে ক্যানভাসে উপস্থাপিত করেছিলেন শিল্পী। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ যুদ্ধবিরোধী ছবিগুলির অন্যতম সেরা।

ছবির নাম 'গুয়ের্নিকা'। শিল্পী পাবলো রুইজ ই পিকাসো।

FotoJet - 2019-10-25T173512.952

১৮৮১ সালে ২৫ অক্টোবর স্পেনের বন্দর শহর মালগায় জন্ম হয় বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী চিত্রকর পাবলো রুইজ ই পিকাসোর।

পাবলো রুইজ ই পিকাসো স্প্যানিশ ভাষার একটি নাম। বাবার নাম হোসে রুইজ ব্লাসকো। মায়ের নাম মারিয়া পিকাসো লোপেজ। তিনি অবশ্য জনপ্রিয় মায়ের নামেই’ পিকাসো’। ছোটবেলা থেকে আঁকতে ভালবাসতেন। তাঁর বাবা একটি আর্ট গ্যালারির কিউরেটর ছিলেন। ছেলের রং-তুলির ঝোঁক দেখে নিজেই নিজের স্টুডিয়োতে রং তুলি ধরতে শেখালেন।

FotoJet - 2019-10-25T173336.975

 বার্সেলোনার ‘লা লোঞ্জা আর্ট স্কুলে’ চারুকলার শিক্ষক ছিলেন হোসে। পিকাসো সেখানেই ভর্তি হলেন।জঈবনের এই পর্বে বোনকে হারালেন। সেই অভিঘাত বেশ তীব্র ছিল পিকাসোর গোটা পরিবারের জন্য। এ সময় তিনি ‘অয়েল অ্যান্ড চ্যারিটি’ নামে একটি ছবি আঁকেন। তাঁর বাবা সেই ছবি পাঠান একটি চিত্র প্রদর্শনীতে।       

তিনি একের পর এক ছবি এঁকেছেন, ভাস্কর্য গড়েছেন। যখন  কিছু করতেন না, আঁকার কাজ বন্ধ থাকত, তখন মেতে উঠতেন ষাঁড়ের লড়াই নিয়ে। তিনি কবিতাও লিখতেন। প্রায় তিনশো’র বেশি কবিতার পান্ডুলিপি পাওয়া গিয়েছে তাঁর।

FotoJet - 2019-10-25T173540.731 

পাবলো পিকাসো তাঁর সামগ্রিক শিল্প জীবনে বারবার বাঁক বদল করেছেন। বিভিন্ন পরীক্ষা- নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। প্রতিবার নতুন নতুন পর্বে প্রবেশ করেছেন। পরিবার নতুন। কিন্তু কোথাও না কোথাও সূত্র থেকে গিয়েছে এক পর্বের সঙ্গে আর এক পর্বের। নতুন কিছুর খোঁজ। সেই খোঁজ করতে গিয়ে দিকহারা হননি তিনি। তাঁর নিজের কথায়, আমি কিছু খুঁজি না, আমি পেয়ে যাই।”

FotoJet - 2019-10-25T173624.548

১৯৭৩ সালের ৮ এপ্রিল ফ্রান্সের মৌগিন্সে ৯১ বছর বয়সে মারা যান পাবলো পিকাসো। মৃত্যুর আগে তিনি ফুসফুসের সংক্রমণে ভুগছিলেন।  

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...