ছ’বছর বয়সে রাস্তার চায়ের দোকানে কাপ ধোয়ার কাজ করতেন। পড়াশোনা সাধারণ পঞ্জাবি মিডিয়াম স্কুলে। হিন্দিতে মিশে যায় পঞ্জাবি টান। চোস্ত ইংরেজি তখন অনেক দূর। তবু তাঁর নিজের চোখে সেইসব ‘ত্রুটি’ আর সীমাবদ্ধতা নিয়েই ওম পুরি হয়ে উঠেছিলেন বলিউড তো বটেই ভারতীয় সিনেমার অন্যতম সেরা মুখ।
মারাঠি নাটক ‘ঘাসিরাম কোতয়াল’ চলচ্চিত্ররূপ দেন পরিচালক কে হরিহরন। সেই ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন। সেটাই তাঁর ডেবিউ ছবি।
বলিউড ঘরানার চেনা পুরুষালী চেহারা তাঁর ছিল না। 'চকলেট বয়' লুক তো নয়ই। বরং অনেকেই তাঁকে ভিলেন ছাড়া আর কিছু ভাবতেই পারেনি। গুটি বসন্তের দাগে ভরা মুখ, প্রখর ব্যক্তিত্ব চেনা ছকের বাইরের এক অভিনেতা। গ্ল্যামার সর্বস্য বলিউডের সব ধারণাকে ওলটপালট করে দিয়ে তিনি হয়ে উঠে ছিলেন তাঁর সময়ের অন্যতম সেরা অভিনেতা। ওম পুরি। শুধু অভিনয়, মেধাবী অভিনয় দিয়েই জয় করেছিলেন সিনেমা প্রেমীদের হৃদয়। আদ্যন্ত সেরিব্রাল অভিনেতা। 'আর্ট হাউস' সিনেমার স্তম্ভ ছিলেন। কিন্তু সেখানেই আটকে থাকেননি।
কমার্শিয়াল ছবিতেও ওম পুরি তৈরি করেছিলেন নিজস্ব ঘরানা।প্যারালাল আর মেইন স্ট্রিমে কখনও দ্বন্দ্ব হয়নি তাঁর কেরিয়ারে। দু জায়গাতেই তিনি ‘পারফেক্ট'। টেলিভিশন দুনিয়াতেও তিনি 'স্টার'। তাঁর 'ভারত এক খোঁজ' আজও সেরা টেলিভিশন প্রোডাকশনের একটি।
চড়াই উৎরাই দিয়ে এগিয়েছে অভিনেতা জীবন। কিন্তু তবু তিনি ভানহীন বেঁচে থাকায় বিশ্বাস করতেন। নিজের মত প্রকাশে সদা অকপট।
জন্ম পাঞ্জাবের অম্বালায়। বাবা রেলে চাকরি করতেন। পরে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তাই বার্থ সার্টিফিকেট ছিল ওমের।
নাসিরুদ্দিন শাহের সঙ্গে ছিল বেজায় বন্ধুত্ব। ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামায় তাঁরা ছিলেন ব্যাচমেট। ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউটে নাসিরুদ্দিন আবার ওমের সিনিয়র। দুজনেই কেরিয়ার শুরু করেন আশির দশকে। তাঁদের বন্ধুত্ব জমাট বাঁধে খাবারের প্লেটে। রেস্টুরেন্টের টেবিলে। দুজনেরই ভীষণ প্রিয় ব্রেন কারি। শুরুর দিকে ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামায় ওম যখন প্রথম আসেন তখন ছিলেন পুরোদস্তুর নিরামিষাশী। বন্ধু নাসির তাঁকে আমিষপ্রিয় করে তোলেন। চল্লিশ বছরের বন্ধুত্ব। ‘আক্রোশ’, ‘দ্রোহকাল’, ‘স্পর্শ’, ‘জানে ভি দো ইয়ারো’, ‘অর্ধসত্য’, ‘পার’, ‘মান্ডি’র মতো সিনেমায় একসঙ্গে অভিনয় করেছেন।
নব্বইয়ের দশকে আন্তর্জাতিক অভিনেতা হিসেবে তাঁর পরিচিতি বাড়তে থাকে। ‘মাই সন ইজ ফ্যান্টাস্টিক’, ‘ইস্ট ইজ ইস্ট’, ‘দ্য প্যারোল অফিসার’-
এর মতো ব্রিটিশ ছবিতে অভিনয় করেন। তবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র এবং তাঁর কেরিয়ারের অন্যতম সেরা ছবি ‘দ্য সিটি অফ জয়’।