নেই। কারণ, গোটা দেশ আজ ঘরবন্দী। এ যেনো পৃথিবীরই মন খারাপ। সে তো আর খবর দিতে পারেনা হঠাৎ কান্না পেলে। এই অসুখ সে নিজে বাঁধিয়েছে না কি কারও ষড়যন্ত্র, সেই বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাবার সময় এটা নয়; বরং এই সময়ে সকলেই পৃথিবীর আরোগ্য কামনায় ব্যস্ত থাকুক।
সবসময় জলেই থাকতে হয়। একবার বাইরে এসে দেখে নেবেনা, তাদের বসবাসযোগ্য জায়গাটা কতটা সুন্দর। সমুদ্র। আর তারা সেই জলাধারের এক বিশেষ ফোটা ফুল। গতবছরেও দেখা মেলেনি তাদের। আর এবারে! বিস্তীর্ণ সমুদ্রতট জুড়ে সারি সারি, তারা চিৎ হয়ে রোদ পোহাচ্ছে। আজ অনেকদিন পর তাদের শরীর পেলো একটু উষ্ণ বালির আদর। তারাও হয়ত মনে মনে ধন্যবাদ জানিয়েছে মানুষদের এই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
অলিভ রিডলি। এক বিশেষ প্রকার সামুদ্রিক কচ্ছপ। উড়িষ্যার রুশিকুল্লা তাদের প্রজনন তট। এইভাবেই চলে আসার সুযোগ খোঁজে তারা। গত বছরও ফিরে যেতে হয়েছিল। কিন্তু এবারে ফ্রেমে তারা। করোনা তাদের কাছেও ভাইরাস। ক্ষতিকর নয়। গহিরমাথা সৈকত সাক্ষী থাকলো এই ঘটনার। এক আধিকারীকের মতে মোটামুটি আট লাখ কচ্ছপ ছয় কোটি ডিম পাড়ে সেই সৈকতে।
ঘটনা যেদিন, সেদিন সকাল থেকেই তারা স্বকীয় মেজাজে। গুটিগুটি পায়ে একটা বাচ্ছা কচ্ছপ তার মাকে ধরার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে। প্রকাশ্য দিবালোকে রোদ যাপন করছিল কয়েক লক্ষ কচ্ছপ। মতামত বন দপ্তরের। ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিসের কর্মী সুশান্ত নন্দা একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যশে তুলে ধরলেন । সমুদ্র সৈকতে আসছে কচ্ছপ সাম্রাজ্য।
প্রত্যেকে প্রত্যেকের থেকে একটু দূরত্ব রেখে বালি সরিয়ে গর্ত খুঁড়ে ডিম পাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই ভিডিও আগেও দেখা গিয়েছে। ফি বছরেই যায়। সেখানে হাজির থাকেন পর্যটকরাও। তাতে অসুবিধা হয় বৈকি। অন্যান্য দিনে গিজগিজ করছে হাজার হাজার পা। সমুদ্র দেখতে আসা জনস্রোত বাঁধা হয়ে দাঁড়াতো কচ্ছপদের ভালোবাসার। এসেও কাছ থেকে ফিরে যেতে হয়েছে কতবার। এবারে মানুষই আসার কথা ভাবতে পারেনি।
গত বছর না আসতে পারার কারণ ছিল ঘূর্ণিঝড় তিতলি। তবে মানুষও এদের নিয়ে ভাবেননা তেমনটাও না। ফি বছরে তাদের জন্য বন দপ্তর ব্যবস্থা করে আর্টিফিসিয়াল হ্যাচারিস। উচ্চতায় দুই ফুট। ওজনে পঞ্চাশ কিলো হয় এক একটা কচ্ছপ। একদিকে মানুষের জীবন সন্ত্রস্ত। অন্যদিকে ডিম পেরে লক্ষ লক্ষ নতুন জীবন উপহার দিল কচ্ছপের দল।
নজির আরও বর্তমান। রোজ গোনা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় পাতায়। স্পেনের রাস্তা হোক আর নিজামের শহর, ঘুরে বেড়াচ্ছে হরিণের পাল। একটা ছোট্ট মেয়ে ভয়ে পিছিয়ে আসছে। আর এক হরিণ শাবক এগিয়ে আসছে তার দিকে। ভাববার বিষয়, ওই মেয়েটিও হয়ত মাস খানেক আগে ঘুরে এসেছে শহরের ছোট্ট চিড়িয়াখানাটা থেকে। তখন তো সে নিজেই বলেছিল তার বাবাকে যে সে একবার ছুঁতে চেয়েছে সোনার হরিণ। তবে আজ কেনো সে এগিয়ে যেতে পারলো না? ভাবুন, মানুষ। আজ এক অতি ক্ষুদ্র ভাইরাস আপনাকে সুযোগ করে দিয়েছে, নিজেকে খুঁজে পাওয়ার। ইতালির একটা দিনের মতই কাটতে পারতো রোজ; যদি আপনি চাইতেন। শিয়রে ব্যাঞ্জো, মুখে বুলি কাটছেন কী আনন্দ আকাশে বাতাসে।