ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রাচীন ইতিহাস বহন করছে ওড়িশা। মহাভারতে যে 'কলিঙ্গ'-এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেই 'কলিঙ্গ' অবস্থিত ছিল ওড়িশা রাজ্যেই। খ্রিষ্টপূর্ব ২৬১ সালে 'কলিঙ্গ' জয় করতেই যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন মৌর্য সম্রাট অশোক। এই যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি দেখা পরেই বৌদ্ধ ধর্ম গ্ৰহণ করেছিলেন অশোক। তাঁর তৈরি বহু বৌদ্ধ বিহার স্থাপত্যের নিদর্শন দেখা মিলবে ওড়িশায়। তবে বাঙালির কাছে ওড়িশা মানেই পুরীর সমুদ্র সৈকত। কিন্তু এই রাজ্যে বহু জনপ্রিয় ভ্রমণ আকর্ষণ আছে।
এই নিবন্ধে ওড়িশার জনপ্রিয় কিছু পর্যটন শহরের নাম ও তথ্য দেওয়া হল
১. ভুবনেশ্বর : ওড়িশার রাজধানী শহর ভুবনেশ্বর। দেশের প্রাচীন শহরগুলির তালিকায় নাম রয়েছে এই শহরের। ঐতিহাসিকদের মতে এই শহর প্রায় তিন হাজার বছর আগে তৈরী হয়েছিল। যদিও প্রাচীন কালে এই শহর কলিঙ্গ ও উৎকল নামে পরিচিত ছিল। বিখ্যাত পরশুরামেশ্বর মন্দির, মুক্তেশ্বর মন্দির, লিঙ্গরাজ মন্দির, উদয়গিরি এবং খন্ডগিরি পাহাড়, ধাউলি পাহাড়, নন্দনকানন চিড়িয়াখানা, যাদুঘর, অনন্তবাসুদেব মন্দির, আসতাসাম্ভু শিভা মন্দির, রাম মন্দিরের মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পর্যটক আকর্ষণ আছে ওড়িশায়।
২. কটক: ওড়িশার পুরনো শহরগুলির মধ্যে অন্যতম কটক। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মস্থান। তাই কটক বাঙালি পর্যটকদের হৃদয়ের খুব কাছে। রাজধানী ভুবনেশ্বর থেকে এই শহরের দূরত্ব প্রায় ২৮ কিলোমিটার। ওড়িশার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কটকের সেরা পর্যটন কেন্দ্রগুলি হল কটকা চান্দি মন্দির, ললিতগিরি, ভিতরকানিকা ম্যানগ্ৰোভ।
৩. সম্বলপুর : ওড়িশার এই শহর বিখ্যাত সম্বলপুরী শাড়ির জন্য। তবে এই শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যটিও তুলনাহীন। তাই পর্যটকদের ভিড় দেখা যায় সম্বলপুরে। হিরাকুন্ড ড্যাম, ডিব্রীগড়ের জঙ্গল, ক্যাটেল দ্বীপ ও সমালেশ্বরী মন্দিরের মতো জনপ্রিয় স্থান রয়েছে এখানে।
৪. কোনারক : ওড়িশা রাজ্যের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্রগুলির মধ্যে ‘হেভিওয়েট’ নাম কোনারক। এই জেলাতেই রয়েছে 'প্রাচীন সূর্য মন্দির'। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্থানগুলির তালিকায় নাম রয়েছে এই মন্দিরের। ঐতিহাসিকদের ধারণা, ১০৭৮-১৪৩৪ খ্রিষ্টাব্দে মাঝামাঝি সময়ে এই মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে এই প্রাচীন মন্দির ছাড়াও বেশি কিছু ভ্রমণ কেন্দ্র রয়েছে। যেমন- চন্দ্রভাগা সমুদ্র সৈকত, এ.এস.আই মিউজিয়াম, অষ্টরাঙ্গা সমুদ্র সৈকত।
৫. রঘুনাথপুর : বাঙালির পছন্দসই ভ্রমণ কেন্দ্রগুলি মধ্যে অন্যতম হল পুরী। আর এই পুরী শহরেই অবস্থিত রঘুনাথপুর গ্ৰাম। ওড়িশার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বহন করছে এই গ্ৰাম। গ্ৰামটি জনপ্রিয় পটচিত্রের জন্যে। বিভিন্ন হস্তশিল্পের কাজ দেখতে পাওয়া যায় এখানে। এই গ্ৰামটি পরী শহরে অবস্থিত বলে খুব সহজেই পৌঁছনো যায় এখানে।
বছরের বিভিন্ন সময়ে ওড়িশায় পর্যটকদের ভিড় দেখতে পাওয়া যায়।তবে অক্টোবর থেকে মার্চ ও নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি মাসে বেশি পর্যটক দেখা যায় এই রাজ্যে।