মেট্রোতে জরিমানা

মেট্রোতে দুর্ঘটনা নিত্যদিনের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের কাছে। সারা দিনে কোনো না কোনো সময়ে কিছু না কিছু সমস্যার মুখোমুখি হই আমরা। প্রযুক্তিগত ত্রুটি তো রয়েছেই, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমাদের নিজেদের চূড়ান্ত অবিবেচকের মতো কাজকর্ম। নিজে প্রতিদিনের মেট্রো যাত্রী হওয়ার সুবাদে লক্ষ্য করেছি, এক একটা রেক-এ কী ভীষণ ভিড় হয়, পা রাখার জায়গা অব্দি পাওয়া যায়না, তার মধ্যেই লোকজন উঠতে যান। এমনকি মহিলারাও কোনো অংশে কম যান না। আমরা নিজেরা যদি নিজেদের জীবনকে একটু বেশি দাম দিই, নিজেদের কাজের তুলনায়, তাহলে কিছুটা অন্তত দুর্ঘটনা রোখা যায়। সব সময় পারিপার্শ্বিক ব্যবস্থার ওপর নির্ভর না করে নিজেরা নিজেদের দায়িত্বে একটু জীবন কাটালে অনেক অনভিপ্রেত ঘটনা এড়িয়ে চলা যায়।

     যে কারনে এত গৌরচন্দ্রিকা, তা এতক্ষণে সকলেই বুঝে গেছেন নিশ্চয়ই। গত শনিবার ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনা যেন আমাদের সকলকে নাড়া দিয়ে গেছে। গোটা ব্যাপারটাই যান্ত্রিক গাফিলতির কারনে হয়েছে, সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কিন্তু সজলবাবু যদি একটু বিচক্ষণতার সঙ্গে অত ভীড়ের মধ্যে না উঠতে চাইতেন, তাহলে নিজের প্রাণটা বেঘোরে দিতে হতনা। একেবারেই নিজস্ব মতামত এটা আমার। এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরেও গত সোমবার আবার পার্ক স্ট্রিট স্টেশনেই এরকম জোর করে ভীড় মেট্রোতে উঠতে যাওয়া এক যাত্রীকে ধরেছে ওই স্টেশনের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মী। তাছাড়া চেন্নাইয়ের এই রেকগুলো আসার পর থেকেই কিছু না কিছু যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ছে। এবারে তার চূড়ান্ত রূপ দেখতে পেলাম আমরা। এই সমস্ত কিছু দিক বিবেচনা করে মেট্রো কর্তৃপক্ষ নতুন কিছু ব্যবস্থা আনতে চলেছে। এবার থেকে মেট্রো রেলে ট্রেনের দরজা বন্ধ হওয়ার মুখে জোর করে কেউ উঠতে চেষ্টা করলে গুনতে হবে কড়কড়ে ৫০০ টাকার নোট। যাত্রীদের সুরক্ষায় এমনটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। এই ধরনের ঘটনা যাতে না হয়, সেই কারনে সতর্ক করা হয়েছে বিভিন্ন স্টেশনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের। এই বিষয় নিয়ে জোরদার আন্দোলন চালানো হবে এবং তার সঙ্গে যাত্রীদের সচেতন করতে প্রচার চালানো হবে বিভিন্ন স্টেশনে।

       শেষ মুহূর্তে হাত দিয়ে বা ব্যাগ দিয়ে দরজা আটকে ট্রেনে ওঠার রেওয়াজ বেশ কয়েকমাস হল বেড়ে গিয়েছে। তাতে মাঝে মাঝেই যাত্রীদের আটকে যেতে দেখা যায়, যার কারণে বার বার গেট খুলে আবার বন্ধ হয় গেট। এর ফলে বেশ কিছু রেকের দরজায় সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানান, মেট্রোর এক আধিকারিক। এই ব্যাপারে অনেক যাত্রীরাই প্রশ্ন তুলেছেন স্টপেজ টাইম বাড়ানো হচ্ছেনা কেন? সেক্ষেত্রে ওই আধিকারিক জানান, স্টপেজ টাইম বাড়াতে হলে যে সংখ্যক ট্রেন প্রতিদিন চালানো হয়, সেই সংখ্যা অনেকটাই কমে যাবে। তাছাড়া যাদের তাড়া থাকার, তাদের তা থাকবেই। শেষ মুহূর্তে ট্রেনে ওঠার অভ্যাস নিজে থেকে না পাল্টালে সময় বাড়িয়ে কিছুই লাভ হবেনা। ওই আধিকারিক তাই জানান, সেই কারণেই যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তার দিকটিকে মাথায় রেখে জরিমানার কথা ভাবা হয়েছে। এছাড়াও কোনো দুর্ঘটনার সময় কোচের মধ্যে থাকা 'টকব্যাক ইউনিট' নিয়ে অনেক সময়েই অভিযোগ ওঠে। এর মাধ্যমেই কোচের মধ্যে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটলে যাত্রীরা সরাসরি তা চালককে জানাতে পারেন। এই ব্যবস্থার কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য ইউনিটগুলিতে ভয়েস রেকর্ডার বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের সুরক্ষায় মেট্রো রেলের আরও যা যা করণীয়, সে সবও করা হবে। কোনও দিক দিয়েই কোনও খামতি যাতে না থাকে, তার ব্যবস্থা করতে হবে।

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...