১৮৭৫ সালে গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারের নাটকের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে নাট্যকাররা সকলে যান উত্তর ভারতে। বিনোদিনী তখন এই দলের প্রধান অভিনেত্রী। জ্যোতিন্দ্র নাথের 'সরোজিনী' নাটকটিতে বিনোদিনীর অভিনয় দর্শকদের মনে রেখা পাত করে। তিনি গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারে মাত্র ১৯ মাস কাজ করেছিলেন। ১৮৭৬ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি শ্রী শরৎচন্দ্র ঘোষের বেঙ্গল থিয়েটারে যোগ দেন মাসিক ২৫ টাকা বেতনে। এই সময়টি হল তাঁর কিশোরী থেকে যুবতীতে পদার্পনের প্রথম ধাপ। তখন তিনি গাম্ভীর্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তিনি প্রতিটি চরিত্র নিজের অভিনয় ক্ষমতার দ্বারা মঞ্চে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। বঙ্কিম চন্দ্রের বহু উপন্যাসে তিনি নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তখন শরৎচন্দ্র ঘোষই ছিলেন তাঁর শিক্ষা গুরু। এখানে বিনোদিনী স্বাধীন ভাবে অভিনয় করার সুযোগ পান। তাঁর অভিনীত কপালকুন্ডলা নাটকটি দেখতে আসেন গিরিশ চন্দ্র ঘোষ এবং ন্যাশনাল থিয়েটারের মালিক কেদার নাথ চৌধুরী।
১৮৭৭ সালে তাঁর অভিনয় দেখে গিরিশ চন্দ্র ঘোষ মুগ্ধ হয়ে বিনোদিনী কে নিয়ে এলেন ন্যাশনাল থিয়েটারে। এটি হল তাঁর জীবনের আরেকটি পর্ব। মূলত এটি হল তার জীবনের শেষ অধ্যায়। সীতা, প্রমীলা, কৈকেয়ী, কপালকুন্ডলা, মতিবিবি প্রভৃতি চরিত্র গুলি তাঁর অভিনয়ের গুণে হয়ে ওঠে বাস্তব। 'মৃণালিনী' নাটকে তাঁর মনোরমা চরিত্র দেখে স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্র বলেছিলেন তিনি মনোরমা চরিত্রটি পুস্তকে দেখেছিলেন কিন্তু বিনোদিনীর অভিনয় দেখে তিনি মনোরমা চরিত্রটিকে সাক্ষাৎ-এ দেখলেন। ন্যাশনাল থিয়েটারে তাঁর অভিনয় শিক্ষার গুরু ছিলেন গিরিশ চন্দ্র ঘোষ। ১৮৮৩ সালের ২১ সে জুলাই 'দক্ষযজ্ঞ' নাটকের মধ্য দিয়ে স্টার থিয়েটারের উদ্বোধন হয়। সীতার চরিত্রে বিনোদিনীকে দেখে সকল দর্শক মুগ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। নলদময়ন্তীতে দময়ন্তী ও ধ্রুবচরিত্র তে সুরুচির চরিত্র তাঁর অভিনয়ের দক্ষতা কে আবার প্রমান করে। ১৮৮৪ সালের ২ রা অগাস্ট স্টারে প্রথম অভিনীত হয় চৈতন্যলীলা। এই নাটকে নিমাই চরিত্রে অভিনয় করেন বিনোদিনী। এই নাটক দেখে স্বয়ং রামকৃষ্ণ বলে ছিলেন আসল নকল এক দেখলাম। খুব আশীর্বাদ ও করেন তিনি বিনোদিনী কে। স্টারে বিনোদিনীর শেষ চরিত্র হল 'বলম্বমঙ্গলে'র চিন্তামনির চরিত্র। মাত্র ৭৯ বছর বয়সে এই মহান অভিনেত্রীর মৃত্যু হয়। গ্রীন রুমের আড়াল থেকে বেরিয়ে তিনি নারীদের অধিকারের দাবি করেছিলেন।