আঁকা শুধু আঁকা নয়, যখন হয়ে ওঠে শিল্পের নিদর্শন...
এক বিকেলে। আকাশের মুখ জুড়ে সন্ধের লালিমা। নিয়ম মেনে সূর্যও পাটে এসেছে। এই দৃশ্য স্বাভাবিক বিকেলের ছবি হিসেবে ধরা দিলো না একজন আগামীর ভাস্বর কে। তাঁর মনে হলো অন্য দিনের মত এক নয় সেদিনের বিকেল। আকাশের রঙ রক্ত মাখা।
গোটা একটা দিনের ক্লান্তি ভুলতে রাস্তার ধারের বেড়ায় হেলান দিয়ে দাঁড়ালেন চিত্রকর। সঙ্গে ছিলেন আরও সঙ্গে। তারা এগিয়ে গেলেও, তিনি পারেননি। শুনতে পাচ্ছিলেন চিৎকার! সেই রাস্তার নীচ দিয়ে বয়ে গিয়েছে সমুদ্রখাঁড়ি। রক্তে রাঙা আকাশ এর গা বেয়ে যেন দ্যোতনা ঠিকরে পড়ছে সমুদ্রের জলে। মনে হবে চিৎকার করে কিছু জানাতে চাইছে প্রকৃতি!
ব্যস, আর কী সেই চিৎকার স্থান কাল ছাপিয়ে চিরন্তন হলো ক্যানভাসে। শিল্পী এডওয়ার্ড মুঁখ। তাঁর সৃষ্টি দ্য স্ক্রিম অফ্ নেচার। মানব অস্তিত্বের সঙ্গে প্রকৃতির অন্য ধারার যোগসূত্র স্থাপন হলো যেন।
চারপাশের বাস্তবতাই শিল্পীদের সৃষ্টিতে অমর হয়ে ওঠে। এই গাঁথাও নিছক কোনও এক ব্যক্তির দেখা সাধারণ বিকেলের প্রতিচ্ছবি; তবুও স্বকীয়। কার্ডবোর্ড ও প্যাস্টেলের সমীকরণ।
সময়টা ১৮৯৩। সাদা কালোর মিশেলে জন্ম নিলো সেই আঁকা। আবেদনবাদী চিত্রকর চাইলেন নিজের সৃষ্টির পুনরুজ্জীবন। তখন দুই বছর অতিক্রান্ত। নতুন কর্মটির নামকরণ করলেন দ্য স্ক্রিম। তারপর কেটে গেলো প্রায় এক শতাব্দী।
এলো ১৯৯৪। স্থান, অসলোর ন্যাশনাল গ্যালারি। রাত। কিছু লোক একটা জানালার কাঁচ খুলে প্রবেশ করলো গ্যালারির অন্দরমহলে। সুসজ্জিত সেই ঐতিহাসিক ছবি শোভা পাচ্ছে সেখানে। এরপর! চুরি হলো ছবিটি।
যদিও ঠিক আগামী তিন মাসের মধ্যে, আজকের দিনে পুনরায় উদ্ধার করা হয় ছবিটি। একটা ইতিহাস রক্ষা পায় নষ্ট হওয়ার থেকে।
কিন্তু ততদিনে বোধ হয় সৃষ্টির উপর পড়ে গিয়েছে কোনও বিনষ্টকারীর দৃষ্টি। এরপর ২০০৪। স্থান, এবারে মুঁখ মিউজিয়াম। বন্দুক হাতে একদল লোক এসে আবারও হরণ করে চিত্রকর্মের গর্ব। সঙ্গে চুরি যায় এডওয়ার্ড এর আরেক সৃষ্টি, ম্যাডোনা। আজও ধোঁয়াশায় থেকে গিয়েছে এর পিছনের কারণ।
যদিও এতে বিচলিত হননা শিল্পী। মনে করতেন, কোনও সৃষ্টিই অবিনশ্বর হতে পারেনা। মানুষ যদি চায় একমাত্র তবেই সেই ঘটনা ঘটে। এরপর নিজের অনেক কর্মই হেলায় ফেলে রাখতেন নিজের কাজের ঘরের বাইরে। কারও যদি তাঁর ছবি নিয়ে ভালো কিছু হয় তবে সেই ভালোকে তিনি স্বাগত জানান।
😱 😱 😱 😱😱 😱 😱 😱 😱 😱 😱 😱😱 😱 😱 😱
চেনা লাগছে এই ইমোজি? সোশ্যাল মিডিয়ার প্রত্যেক দেওয়াল ভর্তি এদের আধিক্যে। আর এরাও অনুপ্রাণিত হয়েছে দ্য স্ক্রিম ছবির সেই প্রটাগনিস্ট এর ন্যায়। আসলে যুগ পেরিয়ে কিছু সৃষ্টি থেকে যায় কালজয়ী হয়ে। স্থান পায় যুগের চাহিদায়। অন্য ঢঙে হলেও থেকে যায় স্মৃতি যা অবিনশ্বর।
আর তাই শুধু ইমোজি নয়, পৃথিবীব্যাপী এই ছবি হয়ে নিঃসঙ্গতার এক মূর্ত প্রতীক।