করোনা ভাইরাসের প্রকোপে যেখানে জীবনযাত্রা, শিক্ষা ব্যবস্থা প্রায় লন্ডভন্ড, সেখানে লালমাটির দেশ এক অভিনব নজির গড়লো বলা যায়। হ্যাঁ, পুরুলিয়ার কথাই বলছি। করোনা ভাইরাসের প্রকোপে আপাতত সর্বত্র স্কুল - কলেজ বন্ধ। কিন্তু তা বলে তো আর পঠন-পাঠন থেমে থাকবে না। এতো সিলেবাস, সেও তো আবার সময়ের শিকলে আষ্ঠে-পৃষ্ঠে বাঁধা। আবার অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা যার সাথে পরিচিতি ঘটছে প্রায় সকলেরই তাতেও কিন্তু সমস্যার শেষ নেই – প্রতি মুহূর্তেই একাধিক প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে সেও। কারণ, সত্যি কি প্রান্তিক জেলা বা প্রত্যন্ত গ্রামে সেই ইন্টারনেট পরিষেবা কার্যকরী? না কি সবাই স্মার্টফোন বিষয়ে ওয়াকিবহাল? এইসব একাধিক সমস্যার সমাধানে যেখানে সবাই দিশেহারা, তখন এই নানাবিধ সমস্যার অবসান কল্পে এক প্রান্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিনব উদ্যোগ ও বাস্তবায়ন সত্যি প্রশংসনীয়। আজ সেই অভিনব উদ্যোগের কথাই বলবো।
এই উদ্যোগের মাধ্যম হলো রেডিও। সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রেডিয়োর মাধ্যমেই স্নাতকোত্তর পড়ুয়াদের ক্লাসের ব্যবস্থা করেছেন। লকডাউন ঘোষণার আগেই অনলাইন ক্লাসের বন্দোবস্ত করেছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু প্রান্তিক জেলা বা ফার্স্ট জেনারেশন লার্নার হওয়ায়, অনেক ছাত্রছাত্রীদের কাছেই নেই স্মার্টফোন, তাছাড়া ইন্টারনেট পরিষেবাতেও তারা ততটা স্বচ্ছন্দ্য নয়। আবার ইন্টারনেট পরিষেবাও নিরবচ্ছিন্ন নয়। তাই অনলাইন পাঠের বিকল্প হিসাবে রেডিওকেই বেছে নিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পুঞ্চার কমিউনিটি রেডিও ষ্টেশন ‘নিত্যানন্দ জনবাণী’ থেকেই প্রচারিত হচ্ছে এই ক্লাস। অনুষ্ঠানের নাম ঠিক করা হয়েছে ‘শিক্ষাঙ্গন’।
২৮শে মে থেকে শুরু হয়েছে এই ‘রেডিও ক্লাস’। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা অবধি চলছে এই পাঠ। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো বিষয় ভিত্তিক বক্তৃতা সম্প্রচারিত হচ্ছে সেখানে। পাশাপাশি এই অডিও ক্লাস বিশ্ববিদ্যালয় ও রেডিয়ো ষ্টেশনের ওয়েবসাইটেও আপলোড করা হয়। দেওয়া হচ্ছে সম্প্রচারের লিঙ্ক। কোনোভাবে ক্লাস না করতে পারলে পরবর্তীকালে ছাত্রছাত্রীরা ডাউনলোড করতে পারবেন ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইট থেকে। পুরুলিয়া ছাড়াও এই রেডিও ষ্টেশনের সম্প্রচার শোনা যাচ্ছে বাঁকুড়ার বেশ কিছু অঞ্চলে। এর ফলে ছাত্রছাত্রীরা যে সমৃদ্ধ হচ্ছে তা বলাই বাহুল্য। সর্বোপরি রেডিও কিন্তু সর্বত্র বিরাজমান।
করোনা ভাইরাসের এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অভিনবত্ত্ব এক অনন্য নজির গড়লো তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর যতই অত্যাধুনিক পরিষেবা হোক না কেন, এ পরিস্থিতেও কিন্তু হাল ধরলো সেই রেডিও- যার বিচরণ ক্ষেত্র শুধু মহালয়ের দিন সকালে নয়, সারা বছর , সর্বত্র।