ফোর ডেটিং, নো সেক্স, নো ম্যারেজ, নো চিলড্রেন রিয়ারিং
লি। বয়স চল্লিশের কোঠায়। চাকরি করেন। পরিবার বলতে পোষ্য কুকুর। বিয়ে সিঙ্গেল লেডি। বিয়ে করেননি। কেউ এ নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করলে বলেন, ‘মহিলা হিসেবে আমি মনে করি বিয়েতে সুবিধার থেকে অসুবিধাই বেশি’।
দক্ষিণ কোরিয়ার বহু মহিলাই বিয়ের মতো প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্কে অনীহা দেখাচ্ছেন। প্রতি বছর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এমন মহিলাদের সংখ্যা।
বিয়ের বাজারে আমার আগের জীবন, আমার কাজ, আমার পড়াশোনা এগুলো কোনটাই গুরুত্ব পাবে না। শুধু দেখা হবে তুমি তোমার স্বামী এবং তার পরিবারের কতটা খেয়াল রাখতে পারছ।
দক্ষিণ কোরিয়ায় বেশির ভাগ উচ্চ শিক্ষিত মহিলারই এমন মত।
সম্প্রতি একটি সিনেমা রিলিজ করেছিল। ‘কিম জি ইয়ং- ১৯৮২’ নামে। সিনেমার বিষয় কোরিয়ার উচ্চ শিক্ষিত মহিলারা কিভাবে বাড়ি আর বিয়ের চাপে তাদের কেরিয়ার ছাড়তে বাধ্য হয়।
এক বিতর্কিত নারীবাদী উপন্যাসকে সিনেমায় তুলে ধরা হয়েছিল। দক্ষিণ কোরিয়ার এক মহিলা সংসারের চাপে চাকরি ছেড়ে সন্তানকে বড় করে তোলার জন্য কীভাবে লড়াই করেন এই নিয়ে ছবির গল্প।
সিনেমাটি গড় রেটিং পেয়েছে ৯.৫। তার প্রায় সবটাই মহিলাদের। পুরুষদের বিচারে রেটিং টা দাঁড়িয়েছে ২.৪।
অথচ এক দশক আগে মতটা ছিল একেবারে আলাদা। প্রায় ৪৭ শতাংশ মহিলা জানিয়েছিলেন, ‘ বিয়েটা জরুরি’। কিন্তু এখন সেই ছবি রাতারাতি বদলে গিয়েছে।
ফোর-বি, এসকেপ, করসেট- কোরিয়ার সবচেয়ে প্রগতিশীল নারীবাদী মঞ্চ। বিয়ে, মাতৃত্ব, প্রেম এবং যৌনতা এই চার কারণেই মূলত মহিলাদের পুরুষতন্ত্রকে মেনে নিতে হয়। এই চার বিষয় থেকে ক্রমশ বিমুখ হচ্ছে তারা। তাই ক্যাম্পেন চলছে, ফোর ডেটিং, নো সেক্স, নো ম্যারেজ, নো চিলড্রেন রিয়ারিং।
‘ফোর-বি’ অনুগামীদের সংখ্যা। ফোর-বি সদস্যরা জানিয়েছে, ‘এই মুহূর্তে তাদের প্রায় ৪,০০০ ফলোয়ার রয়েছে।’
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট , ইউটিউবেও দেখা যাচ্ছে একই ট্রেন্ড। যৌনহেনস্থা থেকে শুরু করে, স্পাই ক্যাম- এর অত্যাচার সবেতেই ভুক্তভোগী হয় মেয়েরা। আলোচনায় উঠে আসছে এই সমস্ত বিষয়গুলোও।
উন জি নামে এক তরুণীর ভাষায় বেশির ভাগ সমইয়েই পৃথিবী আমাদের ‘নরম-সরম’ ভেবে নেয়। তারা শুধু মেক-আপ আর ফ্যাশন নিয়ে ব্যস্ত এই ধারনা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ইন্টারনেট সার্চ করলেই বিষয়টা স্পষ্ট হবে। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।
শুধু কথার কথা হয়, বাস্তবিক ক্ষেত্রেও তাই ঘটছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় শিশু জন্মের হার কমতে শুরু করেছে। মাতৃত্ব থেকে মুক্তি চাইছে মহিলারা।
২০১৮- এ জন্মের হার ০.৯৮ শতাংশ কমেছিল। ২০১৯-এ তা ২.১ শতাংশ কমেছে। এভাবে কমতে থাকলে ২০৬৭-তে দক্ষিণ কোরিয়ার জনসংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৩২ মিলিয়ন। বর্তমান জনসংখ্যা ৫৫ মিলিয়ন। দেশের বেশির ভাগ নাগরিকের গড় বয়স হবে ৬২।
এমন আশঙ্কা থেকেই দক্ষিণ কোরিয়ার প্রশাসন বিয়ের ভালো দিক নিয়ে জন সাধারণের মধ্যে প্রচার চালাতে শুরু করেছে। এমনকি বিয়ে করলে বাড়ি বা অন্য লোনের ক্ষেত্রেও দেওয়া হচ্ছে ছাড়।
কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার সিংহভাগ মহিলা বিয়েকে নয়, ভবিষ্যৎ দেখছেন স্বাধীন হয়ে ওঠার মধ্যেই। আর এই সত্যকে অস্বীকার এর কোন জায়গা নেই।
এই সত্যিই ঝরে পড়ে লি-এর গলাতেও। লি বলে, ‘ আমার স্বপ্ন এমন একটা বাড়ি তৈরি করা যেখানে শুধু মহিলারাই থাকবে। যারা কোনদিন বিয়ে করবে না’।