মেট্রো শহরের ক্যাকফনিতে তাঁকে পাওয়া যায় না। মিডিয়া আর গ্ল্যামারের ফ্ল্যাশলাইট থেকে অনেক দূরে পাহাড়ের কোলে তাঁর বাস। প্রতিবেশি রাস্কিন বন্ড। শহরের ভিড়ে তিনি খুব আসেন না। যদিও বা আসেন তা একেবারেই ছবির প্রয়োজনে।
এক সময় লোকে তাঁকে চিনত বাংলা ছবির ‘অ্যাংরি ইয়াংম্যান’ হিসেবে। টকটকে ফর্সা রং, টিকালো নাক, খয়েরি চোখ, লম্বা চেহারা- দেখে বোঝার উপায় ছিল না তিনি বাঙালি। বাংলা ছবির দর্শক তাঁকে চিনেছিলেন ‘ভিক্টর’ নামে। পুরো নাম ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়।
উত্তরপাড়া আর চাঁচল রাজপরিবারে জন্ম। পিতামহ উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। পড়াশোনা শিলঙের সেন্ট এডমন্ড'স্ স্কুলে। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে ইংরেজী সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা। সেখান থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্যের ছাত্র। স্কলারশিপ নিয়ে পরে ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজে। ‘ক্যালকাটা লাইট অপেরা গ্রুপে’র প্রযোজনায় কণ্ঠশিল্পী ছিলেন।
সত্তরের দশকে পা রেখেছিলেন ছবির দুনিয়ায়। তিনি আসলে সত্যজিৎ রায়ের আবিষ্কার। প্রথম ছবি মুন্সি প্রেমচন্দের কাহিনী অবলম্বনে ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’। পরে ‘পিকু’, ‘ঘরে বাইরে’।
পরবর্তী সময়ে তাঁর ফিল্ম কেরিয়ারে যোগ হয়েছে মৃণাল সেন, শ্যাম বেনেগল জেমস আভরি, ডেভিড লিন, রোমান পোলানস্কির মতো নাম।
বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি, ভারতীয় আঞ্চলিক ভাষা তো বটেই তিনি গ্রিক, আর্জেন্টিনীয় ছবিতেও অভিনয় করেছেন। ভৌগলিক গন্ডির মধ্যে নিজেকে বাঁধেননি কখনও।
অন্যধারার ছবিতে দিয়ে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন কিন্তু পরবর্তী সময়ে পুরোদস্তুর বাংলা বাণিজ্যিক ছবিতে সমান স্বাচ্ছন্দ্য।
আন্তর্জাতিক দর্শকদের সঙ্গে প্রথম পরিচিত হন ডেভিড লিনের ছবি ‘আ পাসেজ টু ইন্ডিয়া’ দিয়ে। সেখানে তিনি ডাঃ আজিজ আহমেদের ভূমিকায় অভিনয় করেন।
তিন-তিনবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। প্রতিবারই আলাদা আলাদা ভূমিকায়। অভিনয়ে, পরিচালনায় এবং চিত্রগহণে।
আর্জেন্টিনার পরিচালক পাবলো সিজারের পরিচালনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ভিক্টোরিয়া ওকম্পোর সম্পর্ক নিয়ে ছবি ‘থিঙ্কিং অফ হিম’-এ কবিগুরুর ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
তাঁর মতো বর্ণময় কেরিয়ারগ্রাফ ভারতীয় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মধ্যে বিশেষ দেখা যায় না। শুধু সিনেমা নয়, তাঁর প্রতিদিনের জীবনও তাঁর কাজের দুনিয়ার মতোই বহুমাত্রিক। নিজের পড়াশোনা, ছবি, প্রতিবন্ধীদের জন্য স্কুল আর পাখি, প্রকৃতি নিয়ে মসৌরি পাহাড়ে ভালই আছেন তিনি।