নিউটনের আন্নাস মিরাবিলিস

নিউটনের আন্নাস মিরাবিলিস

করোনা ভাইরাসের কারণে গোটা বিশ্ব জুড়ে যে মৃত্যু মিছিল চলছে তাতে প্রায় বিশ্বের সর্বত্রই লকডাউন চলছে।  আশ্চর্যের বিষয় হলো এই , যে এহেন পরিস্থিতি গোটা বিশ্বের দেশগুলো কিন্তু এর আগে প্রত্যক্ষ করেনি।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ কোনো না কোনো সময়ে মহামারী  কবলিত হয়েছে  -কিন্তু একই সাথে সব কটি দেশ বিপদসীমার উপর দাঁড়িয়ে ওষুধের অভাবে অসহায় হয়ে পড়েছে এমন ঘটনা ঘটেনি।আর ফলে এই লকডাউন। উদ্দেশ্য সোশ্যাল ডিস্টেন্সিঙ , যা এই ভাইরাস  সংক্রমণ প্রতিরোধের আপাত ওষুধ। যার জেরে সবাই প্রায় ওয়ার্ক ফ্রম হোম অর্থাৎ  বাড়ি থেকেই কাজের ব্যবস্থা করছেন। এ  এমন ছোঁয়াচে যে কার কখন কি ভাবে তা হবে বলা যাবে না। কিন্তু এই ওয়ার্ক ফ্রম হোম , সোশ্যাল  ডিস্টেন্সিঙ   বিষয়টি আজকের ধারণা নয়।  বলে রাখা ভালো যে, বিজ্ঞানের বিখ্যাত  সূত্র আবিষ্কার হয়েছিল এই ওয়ার্ক ফ্রম হোম কন্সেপ্টের মাধ্যমে।  করেওছিলেন এক অতি পরিচিত স্বনামধন্য  বিজ্ঞানী।  এই নিয়ে আজ কথা হোক।

newton2

সময়টা ১৬৬৫-১৬৬৬। ইংল্যান্ড প্রত্যক্ষ করেছিল এক চরম মহামারীর -বুবোনিক প্লেগে  ।  গোটা  ইংল্যান্ড ছারখার হয়ে গিয়েছিল - যা  দ্য গ্রেট প্লেগ অফ লন্ডননামে পরিচিত । মৃতের সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। চারিদিকে হাহাকার; বন্ধ হতে থাকে সমস্ত স্কুল, কলেজ, অফিস।  ঠিক এই  সেই সময়  আইজ্যাক নিউটন ছিলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজের ছাত্র।  এমন সময়  প্লেগের  আক্রমণে ছাত্র, শিক্ষকদের সুরক্ষার জন্য বন্ধ হল কেমব্রিজ, ট্রিনিটি।  আর বাকিদের মতো নিউটনও  হয়ে পড়লেন ঘরবন্দি। তবে সেই সময়কে তিনি সদ্ব্যবহার করতেও ছাড়লেন না।  শুরু করলেন সেই  ওয়ার্ক ফ্রম হোম ! এই সময়টাই তাঁর  জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ  মুহূর্ত। একের পর এক তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন।   নিউটনের ওই একটা বছর  ‘আন্নাস মীরাবিলিস’  অর্থাৎ  "বিস্ময়ের বছরহিসাবে চিহ্নিত করা হয়    newton1

 ওই  গৃহবন্দী সময়ে  যুগান্তকারী সব আবিষ্কার করেছেন। প্রথমে, তিনি কেমব্রিজে থাকাকালীন যে গাণিতিক সমস্যা নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন তার উপর মনোনিবেশ করেন , আর তার ফল স্বরূপ  যে কাগজপত্রগুলি লিখেছিলেন তা প্রাথমিক ক্যালকুলাসে পরিণত হয়।  এরপরে, তিনি কয়েকটি প্রিজম  নিয়ে  পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার  থেকে অপটিক্স  তত্ত্বগুলি  তৈরী করেন। মার্ধ্যাকর্ষণের ধারণা এবং তাঁর সূত্রও এই সময়ই আবিষ্কার করেন তিনি।  উইলস্টর্পে তার জানালার ঠিক পাশে  ছিল একটি আপেল গাছ। তা নিয়ে যে গল্প আছে তা খানিক সন্দেহের উদ্রেক করলেও তার চমৎকার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় নিউটনের সহযোগী জন কন্ডুয়েটের ব্যাখ্যায়। সেই আপেল গাছ না থাকলেও তার বংশধরেরা আজও সেই স্মৃতি বহন করে চলেছে। যাই হোক  তাঁর এই ঘরবন্দি থাকার সময় যাবতীয় গবেষণা বাইরে আসার পর সবাই চমকে যান রীতিমতো। ফলস্বরূপ, ১৬৬৭ সালে কেমব্রিজে ফেরার  ২ বছরের মধ্যে তিনি নিজের কলেজেই অধ্যাপক হয়ে যান; ফেলোশিপও পান। আর সেই থেকেই তার খ্যাতির চূড়ায় উত্থান। তাই হতাশ না হয়ে ভালোবেসে মন দিয়ে কাজ করুন।   যাতে আনন্দ অনুভব করেন   তাতেই  ভালোলাগা খুঁজে পাবেন , আর তাতে নিউটনের মতো আবিষ্কার না হলেও  সুস্থ তো থাকবেন।  আর তাই  বাড়ি  থাকুন - সুস্থ থাকুন , আনন্দে থাকুন।  

newton3 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...