প্রত্যেক বছর ৩৬ টন করে সবজি ফলছে নিউইয়র্কের রাস্তার ওপর। শুধু মাত্র নাগরিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য নয়, নদীকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্যও এই আবাদ। তিনটি ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল বিল্ডিং- এর রুফটপে ২.৩ হেক্টর জমিতে গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত চাষ হয়ে আসছে সবজি এবং ফলের।
কনক্রিটের ওপর মাটির ঘনত্ব ১০ ইঞ্চি। কিন্তু বছরে মিলিয়ন লিটার বর্ষার জল শোষণ করতে পারে। আগে এই জল শহরের ড্রেন দিয়ে বয়ে যেত। যাতে ময়লা আবর্জনা মিশে ভয়াবহ চেহারা নিত। ড্রেনের জল মিশত গিয়ে হার্ডসন আর ইস্ট নদীতে।
১৯৮০ থেকে নিকাশী ব্যবস্থাকে সামলাতে প্রায় ৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে প্রশাসন। কিন্তু ৭০ শতাংশ ভূমি পেভমেন্টের তলায়। জন সংখ্যাও প্রায় ৮ মিলিয়ন। তাই ভারী বৃষ্টি হলেই ময়লা জলের বন্যায় ভেসে যায় শহর। তারপরেই ব্রুকলিন গ্রেঞ্জ নামে এক ব্যক্তি এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করেন। তিনিই রুফটপ ফার্মিং- এর জনক। তিনি বিশ্বাস করতেন দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নিউইয়র্ক শহরের এই সমস্যার সমাধান করতে পারে কমার্শিয়াল আর্বান এগ্রিকালচার। ২০১০ সালে প্রথম শুরু হয় রুফটপ ফার্মিং। দু’বছর পর সামনে এল ফলাফল।
বাতিল খাবার, শাক-সবজি থেকে জৈব সার তৈরি করে ব্যবহার করা হয়। যে সবজি উৎপন্ন হয় তার বেশিরভাগটা যায় বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে। দু সপ্তাহ অন্তর একটি বাজারও বসায় তারা। সেখানে কৃষকদের থেকে সরাসরি সবজি কিনতে পারে ক্রেতারা। মধুও উৎপাদন করা হয়।
গত কয়েক বছরে প্রায় ৫০ হাজার ছাত্রছাত্রী সাবস্টেনশন্যাল সিটি ফার্মিং শিখতে এসেছে এখানে। পাবলিক কোর্সও করানো হয়।
ব্রুকলিন গ্রেঞ্জ-এর পরের ভাবনা রুফটপে ফুলের বাগান তৈরির। তবে সাধারণ ফুল নয়, ‘ওয়াইল্ড ফ্লাওয়ার’ এর। কমার্শিয়াল বিল্ডিং ছাড়াও প্রাইভেট বিল্ডিং- এ।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম গ্লোবাল ফিউচার কাউন্সিল এর বিচারে রুফটপ এগ্রিকালচার ফার্মিং আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই পৃথিবীর ভবিষ্যৎ হতে চলেছে। অর্থনীতিবিদদের দাবী, ২০১৫ সাল নাগাদ পৃথিবীর মোট জন সংখ্যার ৭০ শতাংশ হয়ে উঠবে শহর কেন্দ্রিক। ফলে অর্থনীতিও হয়ে উঠবে শহরকেন্দ্রীক।