শিশুদের বলা হয়ে থাকে দেবতার রূপ। কিন্তু কখনো কখনো এই দেবরুপী শিশুদের কাছ থেকে হারিয়ে যায় তার শৈশব। অসুখের কবলে পড়ে হাসপাতালের বদ্ধ ঘরেই কেটে যায় তাদের জীবন। খেলার সঙ্গী হয়ে ওঠে হাসপাতালেরই কিছু নার্স ও আয়া। কখনো কখনো ডাক্তারকাকুরাও সঙ্গী হয়ে যায় এই ক্ষুদেদের। কিন্তু সেই খেলা কি পাড়ার বন্ধুদের সাথে খেলার সমান? ছোট্ট একটা খেলাঘরে রান্নাবাটি খেলার সমান? হয়তো না। কারণ হাসপাতাল খেলার জায়গা নয়। চিলড্রেন্স ওয়ার্ডে সুস্থ শিশুদের সাথে থাকে প্রচুর অসুস্থ শিশুও। তাদের সুবিধার কথা মাথায় রাখতে গেলে হাসপাতালের ভিতরে অনেকসময়ই খেলার অনুমতি মেলে না।
সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে বদল ঘটছে চিন্তাধারায়। হাসপাতালে বদ্ধ থাকা শিশুদের জন্য একটি খেলাঘর তৈরী করার অভিনব ভাবনার কথা জানিয়েছে পার্ক সার্কাসের একটি বেসরকারি হাসপাতাল। হাসপাতালে থাকা ক্যান্সারজয়ী শিশুদের জন্য হাসপাতাল চত্বরেই একটি খেলার ঘর বানানোর কথা ভাবছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 'ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ' এর এই রিহ্যাব সেন্টারে থাকা একজন শিশু জানায়, সম্প্রতি সে তার জন্মদিন রিহ্যাবের একটি ঘরেই পালন করেছে। সে সুস্থ তাই বাড়ি সে যেতেই পারতো কিন্তু সে রিহ্যাবের বন্ধুদের সাথেই তার জন্মদিন পালন করতে চেয়েছিলো। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হাসপাতালে থাকার মধ্যেই শিশুরা যাতে একটু আনন্দ পায় তার জন্যই এই ব্যবস্থা।
শিশুদের ক্যান্সার নিয়ে কাজ করা এক সংস্থার কর্ণধার জানান, গত ৬ বছরে ঠাকুরপুকুরের এক ক্যান্সার হাসপাতাল থেকে প্রায় ১৬০০ শিশু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। কিন্তু তার মধ্যে মাত্র ৩২ জন মতো শিশু আবার ফলো আপ করার জন্য ফিরে এসেছে। কত শিশু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে আর কতজন আবারো ফলো আপ করার জন্য আসছে তার সম্পূর্ণ হিসাব থাকে হাসপাতালের কাছে। ফিরে না এলে সংক্রমণের আশংকা থেকে যায়। আর ফলো আপের জন্য আসা শিশুরা যাতে মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারে তার জন্যও ব্যবস্থা করা হয়েছে এই রিহ্যাব সেন্টারের। এই সেন্টারের এক চিকিৎসকের বক্তব্য, এই রোগে আক্রান্ত হওয়া মানুষের মানসিক শক্তি কমে যেতে থাকে। তাই এই ফুলের মতো ছোট শিশুদের জীবন থেকে যাতে তাদের প্রাণশক্তি হারিয়ে না যায় তাই নেওয়া হয়েছে এরকম অভিনব উদ্যোগ।