নেহেরু ট্রফি বোট রেস হল কেরালার প্রিমিয়ার স্নেক বোট রেসের মধ্যে অন্যতম একটি। এটি প্রতিবছর আগস্টের দ্বিতীয় শনিবারে অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রচুর লোকের সমাগম হয়ে থাকে। পুরোনো গানের সুরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রায় ১০০ ফুট দীর্ঘ নৌকা একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা করে থাকে আর তা দেখতেই প্রচুর সংখ্যায় ভিড় জমায় লোকেরা। আলাপুজার কাছে পুন্নামাদা লেকে প্রতি বছর যথাসময়ে লড়াইয়ের জন্য হাজির হয় অসংখ্য প্রতিযোগী, শুরু হয় প্রতিযোগিতার।
এই নৌচালন প্রতিযোগিতার নির্দিষ্ট নামটির পিছনে রয়েছে একটি কাহিনী। ১৯৫২ সালে পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু এই প্রতিযোগিতা দেখতে কেরালায় যান। আর তা দেখে এতটাই আপ্লুত হন তিনি যে নিরাপত্তার তোয়াক্কা না করেই অংশগ্রহণ করেন নৌচালন প্রতিযোগিতায়। পরে ওই বছরেই, তিনি সেখানে কাটানো সময়ের সুন্দর এক অভিজ্ঞতা ও স্মৃতির উদ্দেশ্যে উপহার হিসাবে স্নেক বোটের মত আকৃতিবিশিষ্ট একটি রূপোর ট্রফি তুলে দেন তাদের হাতে। ১৯৬৯ সালের জুলাই মাসে এই ট্রফির নাম রাখা হয় নেহেরু ট্রফি। পাশাপাশি প্রতিযোগিতাটির নামকরণ করা হয় নেহেরু ট্রফি বোট রেস। প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া 8 টি স্নেক নৌকার নাম ছিল নাদুভোগম, চম্বককুলাম, পার্থসারথি, কাভালাম, ভালিয়া দেওয়ানজি, নেপোলিয়ান, নেথাজি, গিয়ারগস। ভেম্বানাডু হ্রদের পশ্চিম কোণে নৌকা প্রতিযোগিতা হয়েছিল। প্রধান বিচারপতি হিসাবে ছিলেন কুরিয়ান জন। ১৯৫২ সালে, নৌকা বাইচটি কোল্লাম জেলার কালেক্টর দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। তারপর ১৯৫৪তে কৈনাকারীর মিনাপ্পাল্লি ভট্টাক্কায়ালে প্রধানমন্ত্রীর ট্রফি হিসাবে হয়েছিল প্রতিযোগিতাটি। ১৯৫৫ সাল থেকে, এটি পুন্নমদা লেকেই পরিচালিত হয়ে আসছে।
এই মরসুমে পুন্নামাদা লেক অঞ্চলটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে আনুষ্ঠানিক এই নৌচালন প্রতিযোগিতার জন্য। বিশালাকার এই নৌকাগুলি চুন্দন ভ্যালম্স্ নামে পরিচিত। স্নেক বোটগুলিকে ‘কিং অফ বোটস’ বলা হয়ে থাকে। এগুলি ছাড়াও ছোট নৌকাও অংশগ্রহন করে থাকে যার আঞ্চলিক নাম হল চুরুলান, ভেপু ভল্লম ও ওডিভল্লম ইত্যাদি। পুন্নামাদা লেক ট্র্যাক লম্বায় ১৪০০ মিটার। স্নেক বোট ভিন্ন ভিন্ন ট্র্যাকে চলে যার প্রতিটি চওড়ায় ১০মিটার। মোট ১১১টি দাঁড় একসাথে স্পর্শ করে জলকে আর প্রতি নৌচালকের সমান কায়িক শক্তি ও দক্ষতার সমন্বয়ে নৌকাগুলি এগিয়ে যায় টার্গেটের দিকে। চুরুলান প্রাচীনকালে ধনী ব্যক্তিদের বাহন হিসাবে ব্যবহৃত হত। চুরুলান নৌকাগুলির দৈর্ঘ্য সাড়ে বারো থেকে সাড়ে কুড়ি কোল এবং তাদের চালকসংখ্যা থাকে ১০ থেকে ৩৭ এর মধ্যে। ওডিস একটি আলাদা ধরণের নৌকা। এগুলি এককালে চোরাব্যবসার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। উল্লেখ্য, কোচিন এবং শহরতলির নিকটবর্তী ব্যয়বহুল অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে দেখা যেত এটি। এগুলির ডিজাইন ছিল বিশেষ গতির জন্য। বিক্ষিপ্ততা সামান্য, উভয় প্রান্তটি সমান। সাড়ে আঠাশ থেকে সাড়ে বত্রিশ কোল এর দৈর্ঘ্য।
জয়ীর শিরোপা পায় তারাই যাদের ক্ষমতা, দক্ষতা ও একতা সম্মিলিত হয়। এই পুরো প্রতিযোগিতাটি বিশেষজ্ঞদের নিয়ন্ত্রণে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তাদের পরিচালনাতেই এই প্রদর্শনী এতটাই দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে যে তা সকলের মনে দাগ কেটে যায়। দাক্ষিণাত্যের একটি আর্ট ফর্ম হিসাবে ভারতের বাইরেও যথেষ্ট খ্যাতিলাভ করেছে। এই বছর ১০ই অগাষ্টে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এটি। ক্রীড়া জগতে যে এটি কেরালার একটা গর্ব তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।