শিক্ষক নিয়োগে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে এন.সি.টি.ই

এই প্রথম বার ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন ইনস্টিটিউশন তার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ১৯,০০০ প্রতিষ্ঠানের পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্ত নিল। এন.সি.টি.ই-র চেয়ারপার্সন সৎবির বেদি-র মতে দেশজুড়ে শিক্ষা ও শিক্ষকতার গুরুত্ব যেন বদলে গিয়েছে। এই ধারণা সকলের মধ্যে প্রচলিত হয়ে গিয়েছে যে বি.এড করা এখন শিক্ষকতা জগতের প্রবেশপথ নয় বরং সাংসারিক জীবনে প্রবেশের চাবিকাঠি। অর্থাৎ বিবাহের জন্য পাত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা পরিমাপের একটা অংশ হয়ে উঠেছে এই বি.এড ডিগ্রি। ফলে মানুষের মাঝে, মানুষের দ্বারা অজান্তেই হেয় হচ্ছে এটি।

টিচার এডুকেশন ইনস্টিটিউশনগুলির প্রায় প্রতিটিতে ১০০টি করে আসন থাকে, ফলে প্রতি বছর ১৯ লক্ষ শিক্ষার্থী স্নাতক হন। দেশে প্রস্তাবিত শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১:২৭, আর সেই হিসাব বলে দেশের ২৬ কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে সামগ্রিকভাবে কেবলমাত্র ৯০ লক্ষ শিক্ষকের প্রয়োজন।

প্রত্যেক শিক্ষক যদি প্রায় ৩০ বছর শিক্ষকতা করেন তবে বার্ষিক টার্নওভার এবং নতুন শিক্ষক প্রার্থীর প্রয়োজন মোটামুটি তিন লাখ, ডঃ বেদী জানান। আর অসংখ্যক স্নাতকদের দলে এমন স্নাতকও রয়েছেন যাঁরা ক্লাসে না গিয়েই বিএড ডিগ্রি অর্জন করেন এবং শিক্ষক হওয়ার অভিপ্রায় ছাড়াই চাকরির সন্ধানে স্নাতকও হন। যদি ১০,০০০ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়াও হয়, তবুও শিক্ষক তৈরির হার থাকবে তিনগুন। এই অত্যাধিক স্নাতক তৈরী-ই শিক্ষকতা পেশা অবজ্ঞা ও অবনতির প্রধান কারণ। এ কারণেই একজন প্রকৃত শিক্ষক যিনি একটি প্রজন্মের শিশুদের প্রেরণা, পরামর্শদাতা হওয়ার যোগ্যতা রাখেন, তাঁর পারিশ্রমিক প্রাপ্যের চেয়ে অনেক কম হয়।

বর্তমানে এনসিটিই-র উদ্দেশ্য ভাবী শিক্ষকদে পারফরম্যান্স মূল্যায়ন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করা এবং আগামী শিক্ষাবর্ষে নতুন প্রার্থী আনার আগে অপ্রয়োজনীয় সংস্থাগুলি বন্ধ করা। কেবলমাত্র একটি প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা মেরামত করারই নয়, ৭০০টি মডেল ইনস্টিটিউশন তৈরী করা হবে(জেলাতে অন্তত একটি)। অধ্যক্ষ এবং প্রধান শিক্ষকদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষাদানের যোগ্যতা সহ নতুন উদ্যোগ শুরু করতে চলেছে এনসিটিই। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিদ্যালয় বা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল-এর যুগে শিক্ষকের চাহিদাকে পূরণ করবে এই পদ্ধতি এবং বিদেশে শিক্ষকতা করতে চান এমন মানুষকেও সম্ভাব্যভাবে প্রস্তুত করবে।

এই বছর সিলভার জুবিলি বর্ষে এনসিটিই তার মিশনটির পুনঃমূল্যায়ন করছে। এটির মূল লক্ষ্যগুলি শিক্ষক প্রশিক্ষণের পাঠ্যক্রম পুননির্মান করা এবং তাদের অধীনে সংস্থাগুলি নিয়ন্ত্রণ করা। শিক্ষক হল ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দিশারী আর এই পেশা কালিমালিপ্ত বা হেয় হলে তা সমগ্র মানবজাতির ক্ষতি। তাই এই সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী হবে বলেই আশাবাদী এনসিটিই।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...