সাংস্কৃতিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা পশ্চিম মেদিনীপুরের 'নয়া'-কে

বাংলার পটচিত্র একটি অতি প্রাচীন আঞ্চলিক ছবি এবং গানের মিলিত ফর্ম। এই শিল্পের মাধ্যমে এক সময় এক জায়গার মানুষের কথা অন্য জায়গার মানুষ জানতে পারত। বলা যেতে পারে, একসময় সংবাদমাধ্যমের কাজ করত এই পটচিত্র। সাংবাদিক হিসেবে পটুয়ারা তাদের রচিত ছবি এবং তার সঙ্গে গানের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতেন। এই শিল্পের মাধ্যমেই পুরাণ তথা মহাকাব্য সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে এসেছিল। কিন্তু কালের নিয়মে তা একসময় কদর হারায়। তবে বিংশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে একটু একটু করে এই শিল্প মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে থাকে। বর্তমানে তা নিজের জায়গা করে নিয়েছে তা বলাই যায়।

                    পটচিত্রের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে সরকার এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির অবদান অনস্বীকার্য।  এই শিল্পের গ্রাম হিসেবে পশ্চিম মেদিনীপুরের 'নয়া' শুধু বাংলায় নয়, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। পটচিত্রের এই গ্রাম এককথায় ফটোজেনিক। বহু পর্যটক এখানে শিল্পীদের ছবি আঁকা দেখতে বা তাদের আঁকা ছবির ফটো তুলতে এই গ্রামে আসেন। সেই কারনে গ্রামটিকে সাংস্কৃতিক পর্যটন কেন্দ্র রূপে গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে 'কলকাতা সোসাইটি ফর কালচারাল হেরিটেজ'

                      এই উপলক্ষ্যে ভারতীয় জাদুঘরের আশুতোষ জন্মশতবার্ষিকী হলে ১৫ জানুয়ারি থেকে ২০ জন চিত্রগ্রাহকের আঁকা ৪২টি ছবির প্রদর্শনী শুরু হল। এই প্রদর্শনী চলবে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। এই প্রদর্শনীতে যে ছবিগুলি রয়েছে তাতে একাধিক বাড়ির দেওয়ালচিত্রে ধরা পড়েছে কালীঘাটের পট এবং অন্যধারার পটচিত্র। এমনকি, আজকাল প্রাকৃতিক রঙের বদলে অ্যাক্রেলিকের ব্যবহারও দেখা যায় অনেক বেশি মাত্রায়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে শুভাপ্রসন্ন জানান, আধুনিক রং-তুলি ব্যবহার করা হলে বা ঘরানার বাইরে গিয়ে অন্য ধাঁচের ছবি আঁকলে পটচিত্রের ঐতিহ্যটাই হারিয়ে যাবে। কারণ পটচিত্রের ছবিতে প্রাকৃতিক রঙের ব্যবহার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

                  উদ্যোক্তাদের পক্ষে সৌরভ মুখোপাধ্যায় তাঁদের উদ্দেশ্যের কথা জানালেন। তাঁরা চান এই শিল্পকে ঘিরে সাংস্কৃতিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠুক নয়াগ্রাম। সেই উদ্দেশ্যে 'ক্যাপাসিটি বিল্ড' করতে গ্রামের বারোটি পরিবার থেকে একজন করে বেছে নিয়ে মোট বারো জনকে প্রশিক্ষিত করে তাঁরা একটি ক্লাস্টার গঠন করছেন। প্রশিক্ষিতরা হোম স্টে-র ব্যবস্থা করছেন। ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যাতে মোটামুটি বারোটি পরিবার সেখানে গিয়ে থাকতে পারেন। মহিলা এবং পুরুষদের জন্য আলাদাভাবে ডর্মিটরির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাঁরা চান, গ্রামটি স্বনির্ভর হয়ে উঠুক। যাঁরা পটচিত্রের এই গ্রামকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে চান, তাঁরা যাতে এখানে থেকে নিজেদের কাজ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...