"কলকাতার রাস্তায়"
মন যখন ঘোরে কলকাতার অলিগলি অথবা পেটের খিদে আর লোভ যখন ঘোরে খাবার থেকে আরো খাবারের দিকে তখন ক্ষুধার্ত বাঙালির মনে শুধু কি মাছ আর রসোগোল্লাই আসে? খিদে পাওয়া মন মাঝে মাঝে খেতে চায় নবাবী খাবারও। হ্যাঁ, আমাদের 'city of joy' শুধু যে মাছে ভাতে মোড়া এমনটাই কিন্তু নয়। নানারকমের খাবারে মোড়া এই শহরে আছে নবাবী খাওয়া দাওয়াও। এই খাবারগুলো এক একটা সভ্যতাকে তুলে ধরে। তুলে ধরে এক যুগের ঐতিহ্য।
"নবাবী প্লেট"
সম্মোহিত সুবাস, স্বাদযুক্ত ভাত, ঠিক পরিমানে ও নিখুঁতভাবে মশলার ব্যবহার তৈরী করে এই অভিনব মিশ্রণ। যা হলো সবারই অতিপ্রিয় বিরিয়ানি। বিরিয়ানি খাওয়া এখন খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু যেই ঐতিহ্য লখনৌ আর হায়দ্রাবাদ ধরে রেখেছে সেই একই স্বাদ আছে আমার শহর কলকাতাতেও। এই খাবারের এক অনন্য স্বাদ আছে যা ভারতীয় হয়ে ভুলে থাকা যায় না।
"খাজা বিরিয়ানি, সাথে কিছু প্রশ্ন ও এক প্লেট পার্সেল"
দোকানটার নাম বড়োই অদ্ভুত। নাম 'খাজা বিরিয়ানি'। খুব হাসতে হাসতেই ইকবাল ভাই বললেন 'খাজা বাবার নামে রাখা এই দোকানের নাম' হঠাৎ এই উত্তরে চমকেই গেছিলাম। পরে পড়াশুনা করে জানলাম মুসলিম ধর্ম গুরুদের খাজা বলা হয়। এই নামেই তারা তাদের আল্লাকে আহ্বান করে। এই অদ্ভুত নামের রহস্য হল এটাই।
ইকবাল হোসেন ভাই জানালো ২০ বছর ধরে এই দোকান তারা চালাচ্ছে। দিনের পর দিন শক্ত হাতে, নিখুঁত হাতে বিরিয়ানির এই একই স্বাদ বজায় রেখেছে তারা।
'কেন বিরিয়ানির দোকান শুরু ? '
' অন্য বড় বড় দোকানেও তো বিরিয়ানি খান, ৬০ টাকা হাফ প্লেট কি পাওয়া যায়? "
সত্যিই তো তাই ৬০ টাকার হাফ প্লেট খেয়ে মন ভরে যায়। সাথে আছে কাবাব, আছে মন ভরে যাওয়া সুস্বাদু সুভাস।
কথায় কথায়, গল্পে গল্পে, বেরিয়ে এল ইকবাল ভাইয়ের শখ। যেই মানুষটা সারাদিন খেটে খুটে, সবার পেট ভরিয়ে বাড়ি যায়, সেই মানুষটার শখ হল শায়েরি। হ্যাঁ, শায়েরি করে আমাদের দাদা। লজ্জায় লাল হয়ে প্রকাশ করলেন সেই কথা 'আমার কাছেও অনেক গল্প আছে, আমার শায়েরি খুব ভালো লাগে'
মেদিনীপুরে ফেলে আসা পরিবারের কাছে যায় ছুটিতে।
'তাঁদের ছেড়ে এসে কাজ করতে আসা কেন? '
'কি করবো? কিছু তো করতে হতো, এটাই পারতাম '
ফিরলাম দুই প্লেট বিরিয়ানি পার্সেল নিয়ে। দেখলাম আমার এই প্রশ্ন তাঁদের কেমন উৎসাহ দিল। দেখলাম লজ্জা আর খুশি মেশানো এক আনন্দ। বিভিন্ন খাওয়ারের পেছনে রয়ে গেছে ইকবাল ভাইদের মতো অনেকের ভেতরের না জানা গল্প।