১৯৮৩ সালে অভিষেক টেস্ট খেলেন খেলল ছেলেটি। বিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্যাট হাতে করলেন সাকুল্যে ১৯ রান। পরের ম্যাচেও বিশেষ কিছু করতে পারেননি। রজন বালা লিখেছিলেন – ‘সিধু: দ্য স্ট্রোকলেস ওয়ান্ডার’। সেটাই বদলে দিয়েছিল কেরিয়ার।
ওই সিরিজের পর দল থেকে বাদ পড়েছিলেন নবাগত পাঞ্জাবের ব্যাটসম্যান। পরের সিরিজেই আর দলে জায়গা হয় না। ২০ বছর বয়সী সিধু বাড়ি ফিরে দেখেন, বাবা কাঁদছে। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, নিজেকে পাল্টাতে হবে। বড় ক্রিকেটার হতেই হবে।
১৯৬৩ সালে পাতিয়ালার এক শিখ পরিবারে জন্ম। বাবা সর্দার ভগবন্ত সিং সিধু ছিলেন প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেটার। ছেলে নভজ্যোৎকে তিনি বড় ক্রিকেটার হিসেবে দেখতে চাইতেন। সেভাবেই নিজেকে গড়ে তোলেন সিধু। এমনভাবে কেরিয়ারের শুরুতেই ধাক্কাতে বাবা কেঁদে ফেলেছিলেন। সেই শুরু। নিজেকে বদলাতে সংগ্রাম শুরু হয় পরিশ্রমের।
রোজ ভোর চারটে বাজে উঠে পড়তেন ঘুম থেকে। মাঠে চলে যেতেন। তখনও কেউ আসতো না। নিজেই উইকেটে রোলার চালাতেন। কোনো কিছুই যেন তাঁকে নিজের চেষ্টা থেকে সরাতে না পারে, তাই খুব সাধারণ জীবনে মন দেন। ব্যাট হাতে নিয়ে একটা পর্যায়ে হাত নিয়ে রক্ত বের হয়ে যেত – তবুও তিনি থামতেন না। বাড়ি থেকে হাতখরচ পেতেন সামান্য। সেটা নিয়ে তরুণ বোলারদের জন্য চকলেট কিনতেন, যাতে তারা টানা তাঁকে বোলিং করে যায়। এর মধ্যে দু:সময়ও আসে বাবা মারা যান। কিন্তু, নিজের সংকল্পে অটল থাকেন। ঠিকই দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নেন।
১৯৮৭ বিশ্বকাপে যখন ফেরেন, তখন দেখা যায় তাঁর অন্য রূপ, গড়েন নতুন ইতিহাস। অভিষেকেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করেন ৭৩ রান। সেই বিশ্বকাপে যে পাঁচটা ম্যাচ খেলেন তাতে চারটিতেই করেন হাফ সেঞ্চুরি। একমাত্র সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই পারেননি, সেই ম্যাচ হেরে বাদ পড়ে ভারত। রজন বালা নতুন করে আর্টিকেল লেখেন। শিরোনাম ছিল – ‘সিধু: ফ্রম স্ট্রোকলেস ওয়ান্ডার টু পাম-গ্রুভ হিটার’।
এটুকুতেই বোঝা যায়, নিজেকে কতটা বদলে ফেলেছিলেন নিজেকে। সিধু অনেকবারই অনেক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আর্টিকেলের ওই সমালোচনাতেই নিজেকে আমূল বদলে ফেলতে পেরেছিলেন তিনি। তবে, নিশ্চয়ই তাঁর সংকল্পটাই এখানে মূল ভূমিকা রেখেছে।
প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি আসে শারজাতে, পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৯৮৯ সালে। ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল ১৩৪, ১৯৯৩ সালে সেটা করেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গোয়ালিওরে। ১৯৯৯ সালে তিনি অবসর নেন।
টেস্ট ক্রিকেটে তিনি তিনবার (১৯৯৩, ১৯৯৪, ১৯৯৭) বছরে ৫০০’র ওপর রান করেন। ১৯৯৭ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে করেন ক্যারিয়ারের একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরি। ২০১ রানের সেই ইনিংসটা ছিল ১১ ঘণ্টা লম্বা! ১৯৯৪ সালে এক বছরেই ওয়ানডেতে করেন ৮৮৪ রান রান। ৫০ টির বেশি টেস্ট ও ১০০ টির বেশি ওয়ানডে খেলে তিনি সাত হাজারের ওপর রান করেছেন। ১৮ বছরের লম্বা ক্যারিয়ারে করেছেন ২৭ টি প্রথম শ্রেণির সেঞ্চুরি।
বিতর্ক রয়েছে ক্রিকেট কেরিয়ার এবং পরবর্তীতে রাজনৈতিক কেরিয়ারে। ১৯৯৬ সালে, নভজ্যোত সিং সিধু ভারতের ইংল্যান্ড ক্রিকেট সফর থেকে ফিরে অধিনায়ক মহাম্মদ আজহারউদ্দিনের সাথে বিতর্কে জড়ান। ক্রিকেট বোর্ডের এক প্রাক্তন কর্মকর্তা সাম্প্রতিক স্মৃতিচারণে লিখেছেন, তখন ভারতের প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম সিধু তাঁর অধিনায়ককে কটু কথায় আক্রমন করেছিলেন।
দু বছর পর, পাঞ্জাবের পাতিয়ালা শহরে পার্কিং নিয়ে বিরোধে সিধু ৬৫ বছর বয়সী ব্যক্তিকে আঘাত করেন। পরে লোকটি হাসপাতালে মারা যায়।আদালত তাকে হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত করে। সুপ্রিম কোর্ট তাকে আঘাত করার জন্য সামান্য জরিমানা দিয়ে দোষী সাব্যস্ত করেছিল, কিন্তু হত্যাকাণ্ড থেকে বেকসুর খালাস করেছিল।