আত্মীয় শব্দটার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে আত্মার অস্তিত্ব। আত্মীয় মানে আত্মিক যোগাযোগ। বন্ধন। খুব কাছের। যেখানে আড়াল করতে হয় না কোন কিছু। কখনো পার্থিব জিনিসেও খুঁজে পাওয়া যায় এরকম আত্মিক বন্ধন। যেমন বই। আমাদের সারা জীবন কেটে যায় এমন আত্মীয়ের খোঁজে। জীবনে পরিবার-পরিজনের অভাব না থাকলেও আত্মীয় হয়ে উঠতে পারে কজন! সোলমেট শব্দটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবহার করা হলেও সম্পর্কের সেই উত্তরণ যেখানে একে অপরের আত্মাকে ছুঁতে পারা যায় তেমনটা সচরাচর ঘটে না! তবে যে পরশপাথর চাঁপা ফুলের মত সুবাসযুক্ত, পলাশের মতো স্নিগ্ধ, পাহাড়ের মত অহংমুক্ত, আকাশের মত বিস্তৃত তার উপস্থিতি ঝিনুক সমেত মুক্তোর মতই। তাকে উপলব্ধি করতে পারলে স্বেচ্ছায় নিজের আত্মা অবধি পৌঁছানো যায়। সেই পরশপাথর কিন্তু বিরল নয় একেবারে। তার খোঁজ পাওয়া যাবে কোথায়? অবশ্যই প্রকৃতি ও তার সৌন্দর্যে। যাকে অনুভব করলে বা যার কাছাকাছি পৌঁছলে নিজের কাছে পাড়ি দেওয়া হয়। নিজের মনের অলিগলিগুলো ঘুরে আসা যায়। মনের সব গুপ্ত রাস্তা, সুপ্ত ইচ্ছে যেখানে যাওয়া হয়না সময়ের অভাবে, ব্যস্ততার দড়ি টানাটানিতে, প্রকৃতির কোলে চড়ে সেখানে ঢুঁ মেরে আসা যায় অনায়াসেই। প্রকৃতি অবধি পৌঁছানোর রাস্তাটা পরিচিত আমাদের কাছে।কি সেই রাস্তা? সাধ্যমত বেড়াতে যাওয়া। ভাইরাসের থাবায় অতিষ্ঠ এই জীবনে বেড়াতে যাওয়া এখন মরীচিকার সমান। তবুও সতর্কতার হাত ধরে, সচেতনতা মেনে প্রকৃতির পানে ছুটতে শুরু করেছেন অনেকেই। তবে সে নেহাতই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো। একদিকে কোয়ারেন্টাইনের গেরো, অন্যদিকে বিপর্যস্ত পরিবহন ব্যবস্থা। তাই সুদূরে পাড়ি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না এখনো। বুক দুরু দুরু করলেও কাছেপিঠেই যাচ্ছেন মানুষ। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অর্থনীতি। ভ্রমণপ্রেমী মানুষদের মনে জমছে বিষাদ। নষ্ট হচ্ছে মানসিক স্থৈর্য। পাহাড় হোক বা সমুদ্র অথবা জঙ্গল, প্রকৃতি সবসময়ই মানুষের কাছে এক অপার বিস্ময়। আর ভ্রমণপ্রেমী মানুষ হলে তো কথাই নেই। একই পাহাড় বা সমুদ্র বা একই রাস্তা দেখলেও তাক লেগে যায় তাদের। সোনার কেল্লা দেখে মুকুল যেমন বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছিল প্রকৃতির সৌন্দর্যের ডালিও আমাদের ততটাই বিস্মিত করে। বাক্যহারা হয়ে পড়ি আমরা প্রকৃতির সৌন্দর্যের কাছে। বারংবার আছড়ে পড়া সমুদ্রের ঢেউ জীবনের ওঠা-পড়ার প্রতীক। পাহাড়ের চূড়াগুলোর দিকে তাকালে নিজেদের ব্যক্তিগত যন্ত্রণাগুলো বিন্দুর মত মনে হয়। আকাশের শামিয়ানায় নিজেদের বড় নিরাপদ লাগে। প্রকৃতির স্পর্শে সঞ্জীবনী শক্তি থাকে। প্রফেসর শঙ্কুর সেই সর্বক্ষমতা সম্পন্ন অ্যানাইহিলিন পিস্তলটার অস্তিত্ব যদি বইয়ের পাতা থেকে বাস্তব অবধি পৌঁছে যেত তাহলে কবে এই ভাইরাস, অতিমারি সব নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত। কিন্তু বাস্তব আর কল্পনার কাটাকুটি খেলায় বাস্তব জিতে যায় বেশিরভাগ সময়। তাই আমরা শুধু আশায় বুক বাঁধি। মুক্তির অপেক্ষায় দিন গুনি।কোন একদিন হয়তো নির্ভয়ে প্রকৃতির কাছে গিয়ে বলতে পারব "এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয় আলোয়"। তবে প্রকৃতির স্বাস্থ্য রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের। তার জন্য প্রয়োজন প্রকৃতির সম্পদের সঙ্গে মিথোজীবিতা। বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা করা। কোনভাবেই প্রকৃতির শান্তি বিঘ্নিত না করা। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই ইকো ট্যুরিজম ধারণাটির উদ্ভব হয়েছে, যা আগামী দিনেও প্রকৃতিকে ভালবাসার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ানো উপভোগ করার সমান্তরাল পথ দেখাবে আমাদের।