ঘরোয়া উপায়েই তুলুন মেকআপ

নিজেকে সুন্দর দেখাতে কে না চায়? আর সেই সুন্দর দেখানোর তাগিদেই রোজ বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে করতে হয় মেকআপ। সে অফিসে যাওয়াই হোক বা কোনো অনুষ্ঠানবাড়ি। অফিসে যাওয়ার সময় হালকা মেকআপ আর অনুষ্ঠানবাড়িতে গেলে একটু বেশি মেকআপ, তফাৎ শুধু এইটুকুই। মূল কথা মেকআপ ছাড়া আজকাল আর বাইরে বেরোননা কোনো নারীই। শুধু নারী বললেও ভুল হবে নিজেকে সুন্দর দেখানোর তাগিদে আজকাল পুরুষরাও মেকআপে কম যাচ্ছেন না। আর অত্যধিক মেকআপের ফলে হচ্ছে ত্বকের দফারফা। রোজ প্রসাধনী সামগ্রী বা সহজ ভাষায় মেকআপ ব্যবহারের ফলে ত্বকের নানা ক্ষতি হতে পারে। ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে ব্রণ, অত্যধিক তৈলাক্ত হয়ে যাওয়া বাদ যায়না কোনো কিছুই। ত্বক বিশেষজ্ঞরা সবসময় বলে থাকেন সারাদিন মেকআপে মুখ ঢেকে থাকলেও রাতে ঘুমানোর আগে সেই মেকআপ অবশ্যই তুলে ফেলা উচিৎ। 

মেকআপ তোলার জন্য বাজারে নানা প্রোডাক্ট পাওয়া যায়। কিন্তু সেইসব রাসায়নিকযুক্ত পদার্থ ত্বকের উপকার করার থেকে অপকার করে অনেক বেশি। তাই অনেকেই এইসব জিনিস দিয়ে মেকআপ তুলতে চান না। আগেকার দিনে মা ঠাকুমার ব্যবহার করতেন প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তৈরী কাজল। সাধারণত ঘি দিয়ে তৈরী সেই কাজল চোখ থেকে তোলা ছিল খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আর সেই সময় তারা ব্যবহার করতেন নারকেল তেল। ওয়াটারপ্রুফ কাজল তোলাটা জন্য তেলজাতীয় মেকআপ রিমুভার ব্যবহারের চল আজও সমানভাবেই রয়েছে। অনেকেই শিশুদের জন্য তৈরী হওয়া তেল দিয়ে মেকআপ তুলে থাকেন।আবার অনেকে শিশুদের ব্যবহারযোগ্য সাবান দিয়েও মেকআপ তোলেন। কিন্তু এইসব জিনিসে পরিমানে কম হলেও রাসায়নিক উপস্থিত থাকে। আর সেই রাসায়নিক পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে ত্বকের ক্ষতি করা শুরু করে। কিন্তু জানা আছে কি আমাদের হাতের কাছেই এরকম অনেক উপকরণ রয়েছে যা দিয়ে খুব সহজেই মেকআপ তুলে ফেলা যায়? সেগুলি কি কি চলুন জানা যাক..........

১) তেল- মেকআপ রিমুভের কথা আসলেই প্রথম যে জিনিসটি মাথায় আসে তা হলো তেল। নারকেল তেল, অলিভ তেল বহু মানুষ ব্যবহার করে থাকেন তাদের মেকআপ তোলার জন্য। মেকআপ রিমুভার হিসেবে তেল ব্যবহার করলে অন্যদিকে একটি সুফল পাওয়া যায়। তা হলো, অনেকসময় মেকআপের ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। আর সেই শুষ্কতা কাটাতে তেলের জুড়ি মেলা ভার। 
২) দুধ- তেলের পরে যে জিনিসটি নাম মাথায় আসে তা হলো দুধ। দুধ একদিকে যেমন শরীরের জন্য ভালো অন্যদিকে তেমনই ত্বকের জন্যও খুব ভালো। আগেকারদিনে সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য রাজার মহিষীরা দুধে ডুবে বসে থাকতেন। এখনকার দিনে দুধের মধ্যে ডুবে থাকাটা একটু কষ্টসাধ্য বটে। কিন্তু মেকআপ রিমুভ তো করে যায়। তার জন্য একটি কটন বল দুধে ডুবিয়ে সেই কটন বলটি দিয়ে কাজল লিপস্টিক খুব সহজেই তোলা যায়। দুধকে ন্যাচারাল ক্লিনজার বলা হয়ে থাকে। তাই মেকআপ করা না থাকলেও শুধু মুখ পরিষ্কারের জন্য ফেস ওয়াসের পরিবর্তে দুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। 
৩) শশা- ত্বকে শসার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি। অতিরিক্ত ঠান্ডা হওয়ার কারণে সানবার্নযুক্ত জায়গায় শশার প্রলেপ দিলে জ্বালা কম হয়। মেকআপ রিমুভার হিসেবেও শশা বেশ ভালোই কাজ দেয়। শশা কুরিয়ে নিয়ে তার রসটি একটি পাত্রে রেখে নিন। এবার কটন বল সেই রসে ডুবিয়ে ধীরে ধীরে কাজল মাস্কারা লিপস্টিক তুলে ফেলুন।এছাড়াও শশা বেটে সেটিও মুখে মাখতে পারেন আপনি। শুকিয়ে গেলে একটি ভেজা কাপড় দিয়ে হালকা করে মুখ মুছে নিলেই দেখবেন সব মেকআপ উঠে গেছে। 
৪) টকদই- গ্রীষ্মে প্রায় সব বাড়িতেই মজুত থাকে টকদই। এই টকদই দিয়েও মেকআপ রিমুভ করা যায়। বাইরে থেকে ঘুরে এসে সারা মুখে টকদই-এর প্রলেপ লাগিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করে ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিলে একদিকে যেমন মুখের মেকআপ সব উঠে যাবে সেরকমই ত্বকের জ্বালাভাবও কমবে। 

সারাদিনের পরিশ্রমের পর বাড়িতে পৌঁছে অনেকেই আর নিজের চোখমুখের দিকে তাকানোর সময় পান না বা ইচ্ছেটাই তখন আর থাকে না। কিন্তু যতই ক্লান্তি থাকুক না কেন মেকআপ না তুলে ঘুমিয়ে পড়লে কিন্তু নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন দীর্ঘদিন চোখে কাজল পরে ঘুমালে ঘুমের মধ্যেই সেই কাজল স্মাজ হয় আর চোখের কোলে জমা হতে থাকে। দীঘদিন এইভাবে থাকার ফলে সেটি একসময় ডার্ক সার্কেলের আকার ধারণ করে থাকে।তাই, যতই ক্লান্তি থাকুক আর সারাদিন যতই পরিশ্রম হোক না কেন, মেকআপ তুলে তবেই ঘুমাতে যাবেন।    
 
 
 
 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...