পিঠে ফুড ডেলিভারীর ব্যাগ। আত্মবিশ্বাসী চেহারা। শরীরের ভাষা বলে দেয় খুব তাড়া আছে কাজের। কিন্তু চশমার চোখের চাপা জেদ নজর এড়ায় না।
প্রশ্নকর্তা জিজ্ঞেস করেন নাম কী? কোথায় বাড়ি?
উত্তর আসে নাম পৌলমী অধিকারী। বাড়ি শিবরামপুর বেহালায়।
ফুড ডেলিভারি করেন পৌলমী। কিন্তু তিনি পেশাদার ফুটবলার। পরিস্থিতির চাপে বেছে নিতে হয়েছে ফুড ডেলিভারির চাকরি।
চারুচন্দ্র কলেজের তৃতীয়বর্ষের ছাত্রী। আন্তর্জাতিক ফুটবলের মঞ্চে বহুবার দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, কিন্তু প্রাপ্তির ভাঁড়ার প্রায় শূন্য।
অনূর্ধ্ব-১৬ ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে জার্মানি, লন্ডন, আমেরিকা, শ্রীলঙ্কা, স্কটল্যান্ডে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ২০১৩ সালে ভারতীয় দলের হয়ে এশিয়া কাপ খেলেছেন। চোটের কারণে মাঠ থেকে দূরে সরতে হয়। সময় লাগে ফিরতে।
মাকে ছোটবেলায় হারিয়েছেন। বাড়িতে বাবা। দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তাঁর ওপর বাড়ির দায়িত্ব আর ফুটবলের দায়। সেই দায় সামলাতেই ফুড ডেলিভারির পেশায়। একাধিক সংস্থার হয়ে বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেন তিনি। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০০ টাকা আয় হয়। এক-একদিন তা নেমে যায় ১৫০ টাকাতেও। তারওপর আছে গাড়ির তেলের খরচ।
দেশের হয়ে খেলেও মেলেনি যোগ্য সম্মান। মহিলা খেলোয়াড়দের বঞ্চনার গ্লানি উঠে এসেছে তাঁর গলায়। যে মেয়েরা খেলার মাঠে আসছে তাঁদের প্রাপ্য সম্মানটুকু যাতে পায় এটাই চেয়েছেন পৌলমী। খেলার মাঠে যে মানুষটি নিজেকে উজাড় করে দিয়ে দেশের জন্য সম্মান নিয়ে আসছে তার দিন কীভাবে চলছে সেটুকু খোঁজ যেন রাখা হয় বলে ভিডিয়োতে তিনি জানিয়েছেন।
যে মেয়ে বিদেশের মাঠে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে সেই মেয়ে খাবার ডেলিভারির কাজ করছে দেখে চমকে গিয়েছেন মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়ের বেগে শেয়ার হয়েছে তাঁর কথা। সমাজের সব স্তরের মানুষ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। অনেকেই যোগাযোগ করতে চেয়েছেন তাঁর সঙ্গে।
প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে অনেক খেলোয়াড় রাজ্য ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার কথা ভাবেন। এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও যে পৌলমী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁকে কুর্নিশ জানিয়েছেন তাঁরা।
পৌলমীর বাড়ি ভর্তি সার্টিফিকেট, খেলার মাঠে তাঁর সাফল্যের চিহ্ন বাড়ি জুড়ে। সেই গল্প বলতে গিয়ে কষ্ট হয়। নতুন করে জেগে ওঠে যন্ত্রণা, তিনি জানেন বাস্তবটা খুব কঠিন, কিন্তু এটাও জানেন যে লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে তাঁকে, খেলার মাঠ তাঁকে এটাই শিখিয়েছে- না জেতা পর্যন্ত হাল ছাড়তে নেই যে।