মাদুর শিল্পে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য জাতীয় পুরস্কার পেলেন বাংলার তিন কন্যা। মেদিনীপুরের সবং-এর শিল্পী মিঠুরানি জানা ২০১৭ ও গৌরীবালা দাস এবং গৌরীরানি জানা ২০১৮ সালের জন্য নির্বাচিত হন। সম্প্রতি দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযুষ গোয়েল তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। করোনার কারণে আটকে ছিল পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান।
তিন শিল্পীর বাড়িই সারতা গ্রামে। অতীতেও এই গ্রাম থেকে সম্মানিত হয়েছেন শিল্পীরা। সবং-এর অন্যতম প্রধান জীবিকা অর্জনের মাধ্যম এই শিল্প। প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ জড়িয়ে আছেন এই পেশার সঙ্গে।
গৌরীবালা দাস সূক্ষ্ম মসলন্দ মাদুর তৈরির জন্য ১৯৯২ সালে ন্যাশনাল মেরিট সার্টিফিকেট প্রাপ্ত। অত্যন্ত দক্ষ এই শিল্পীর নিজস্ব ইউনিটও আছে। বয়ন দক্ষতার জন্য কলামণি পুরস্কার ছাড়াও ২০১৮ সালে তিনি সুইডেনের উরকুল্ট ফেস্টিভ্যালে অংশ নিয়েছেন।
গৌরীরানি জানা অতীতেও জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। কালীর ওপর তাঁর কাজ অত্যন্ত বিখ্যাত। তৈরী করেছেন নিজস্ব ঘরানা। ২০১৬-তে কিরঘিজস্তানের ওইমো ও সুইডেনের উরকুল্ট উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন।
শিল্পী মিঠুরানি জানা ২০০৭ সালে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। পরের বছর পান কলানিধি সম্মান। ২০১১ আর ২০১৮তে দু’বার কলামনি সম্মান পেয়েছিলেন ডেনমার্কের কোপেনহেগেন উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন।
তিন শিল্পীই পুরস্কার পেলেন মসলন্দি মাদুরের জন্য। কিন্তু কী এই মসলন্দি বা মসলন্দ মাদুর?
পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুরের বয়ন শিল্পীরা এই মাদুর তৈরী করেন। বাংলায় মসলন্দের চল শুরু হয় মুসলিম শাসনকালে। তখন রাজাদের পৃষ্ঠ পোষকতায় মিহি কাপড় দিয়ে সূক্ষ বুননের মসলন্দ বানানো হত। জায়গিরদারির প্রথায় রাজস্ব হিসেবে সংগ্রহ করা হত মাদুর।
তবে সেইসব মাদুরের ডিজাইন ছিল সাদামাটা। চারপাশে নকশাদার রেখা। নবাব আলিবর্দি খান ১৭৪৪ সালে জায়গিরদারদের কাছে যে সনদ পাঠিয়েছিলেন তা থেকেই এই নিয়ম চালু হয়। সরকারি প্রশাসনিক দফতরে মসলন্দ মাদুর পাঠানো ছিল বাধ্যতামূলক।
মসলন্দ মাদুর তৈরী হয় ঘাস থেকে। ঘাস কত সরু করে কাটা হচ্ছে তার ওপর মাদুরের সূক্ষতা নির্ভর করে। এক বিশেষ ধরনের কাস্তে দিয়ে কাটা হয় ঘাস। অসম্ভব পরিশ্রম, মনোযোগ আর ধৈর্য্য লাগে কাজটিতে। মাদুর কাঠি কাটার পর জলে ডুবিয়ে সেই কাঠিকে কাজের যোগ্য করে তোলা হয়। তারপর প্রাকৃতিক রঙে রাঙিয়ে শুকিয়ে নেওয়া হয় কাঠি।
বিভিন্ন ধরনের মোটিভ থেকে শুরু করে জীবনযাত্রা, কাহিনি এবং রামায়ণ-মহাভারত ফুটিয়ে তোলা হয় বয়নে।
মেদিনীপুরের মাদুর শিল্প ইউনেস্কোর তরফ থেকে পরিদর্শনও করা হয়। ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মাদুর হাব গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার।