স্কুলছুটদের স্কুলে এনে জাতীয় পুরস্কার

আমরা জানি, আমাদের রাজ্যে একেবারে তৃণমূল স্তরে মানুষের রোজের দিনযাপন-ই একটা অনিশ্চিতের পর্যায়ে থাকে। অর্থাৎ কিভাবে প্রতিদিন খাওয়া হবে, আদৌ খাওয়া জুটবে কি না, তাই নিয়েই মানুষ চিন্তিত থাকেন। বাচ্চাদের খাওয়ানো উপরি চিন্তা। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে প্রত্যেক বাড়ির অভিভবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের প্রতিদিন স্কুলে পাঠাতে চান না। তাঁদের বক্তব্য হল, লেখাপড়া করা বড়লোকদের সাজে, গরিবদের নয়। কম-বেশি সকলেই এই কথা মানেন। তাই কিছুদিন স্কুলে পাঠালেও একটু বড় হলেই বাড়ির খুদে সদস্যরাও বেরিয়ে পড়ে রোজগার করতে। ফলে সরকারি স্কুলগুলোতে স্কুলছুটের সংখ্যা যথেষ্ট বেশি। এই ব্যাপারকেই বদলাতে চেয়েছেন নদিয়ার রানাঘাট ১-নং ব্লকের দোহারপাড়া অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সুলতা বিশ্বাসস্কুলছুটদের স্কুলমুখী করে তিনি অনন্য নজির দেখিয়েছেন। ৬জানুয়ারি দিল্লিতে এই কাজের জন্য স্বীকৃতি স্বরূপ পেলেন জাতীয় পুরস্কার

            শান্তিপুরের ঘোড়ালিয়ার বাসিন্দা সুলতাদেবী তাঁর এই সম্মানের জন্য শুধু তার কাজ নয়, কর্মস্থলের স্থানীয়দের সহযোগিতা ও ভালোবাসাই সাফল্যের আসল কারণ হিসেবে মনে করেন। প্রায় ২১ বছর আগে তিনি এই কাজ করা শুরু করেন। শুরুর সেই দিনগুলিতে বাঁশ গাছের নিচে যাঁদের প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করেছিলেন, তাঁরা আজ অনেকেই উচ্চশিক্ষিত এবং কর্মক্ষেত্রে সফল। কিন্তু ছোটবেলার সেই কাছের দিদিমনিকে কেউই ভুলে যাননি। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি স্কুলছুটদের স্কুলে ফেরানো এখন তাঁর নেশায় পরিণত হয়েছে। এমনকি, নাবালিকার বিয়ে আটকে তার পরিবারকে বুঝিয়ে স্কুলমুখীও করেছেন তিনি। এই কাজের জন্যই শ্রেষ্ঠ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর জাতীয় পুরস্কার পেলেন তিনি। পুরোনো দিনের কথা বলতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন তিনি। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজের লক্ষ্যে অটল ছিলেন তিনি বরাবর। বিশেষ করে স্কুলছুটদের পরিবারকে বুঝিয়ে যখন কোনো ছাত্র-ছাত্রী আবার স্কুলে এসে পড়াশোনা শুরু করে পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার পাঠ নেয়, তখন যে তৃপ্তি তিনি পান, তা আর কিছুর সঙ্গে তুলনা করা যায়না। এইভাবে নিজের কাজে অটল থেকে পুরস্কার পেলেও মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়াই তাঁর আসল পুরস্কার বলে মনে করেন সুলতা বিশ্বাস

    

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...