আপনার চোখ বলে দেবে আপনার ঘুমের পরিমান, গল্পকথা নয় বাস্তবে এটাই সম্ভব করতে চলেছে নাসা। মানুষের চোখের গতিবিধি দেখেই বলে দেওয়া যাবে সেই মানুষটির ঘুমের ঘাটতি আছে কি না! গবেষকরা বলেছেন, অনেকক্ষেত্রেই গাড়ির দুর্ঘটনার কারণ হল ঘুমের অভাব। এমনকি ঘুম কম হলে অনেক মানুষই তাদের কর্মক্ষমতা সম্পর্কে অসচেতন থাকেন। জার্নাল অফ ফিজিওলজিতে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে একাধিক আই মুভমেন্ট টেস্ট-এর মাধ্যমে ঘুমের ঘাটতির পরিমাপ করা যায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নাসার এমস রিসার্চ সেন্টার পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে যে চোখের চলাচলের ধরণ থেকে স্নায়বিক ঘাটতি জানা গেছে। এমনকি অ্যালকোহল বা মস্তিষ্কের আঘাতের কারণে যদি ঘুমের অভাব হয় তবে সেটাও এই পরীক্ষাগুলির মাধ্যমে জানা যাবে। গবেষণার জন্যই একটি বেসলাইন তৈরি করা হয়েছিল এমন কিছু মানুষ নিয়ে যাঁরা দু-সপ্তাহ ধরে প্রতি রাতে ঘুমের নির্দিষ্ট সময়সূচিতে নিয়মিত সাড়ে আট ঘন্টা করে ঘুমোতেন, তাদের সমস্ত রকম ক্ষতিকারক দ্রব্য যেমন অ্যালকোহল, ড্রাগস বা ক্যাফিন থেকে দূরে রাখা হত।
এরপরে তারা নাসা এমস-এর ফ্যাটিগ কাউন্টারমেজারস ল্যাবরেটরিতে আর এক গোষ্ঠী মানুষ নিয়ে গবেষণা চালান যাঁরা আঠাশ ঘন্টা টানা জেগে থাকেন, সারা দিন ধরে তাদের মনিটর করা হয়। পরীক্ষা করে দেখা হয় তাদের চোখের গতিবিধি। দিন ও রাতে পার্থক্যও লক্ষ্য করা হয়। গবেষকরা দেখতে পেয়েছিলেন যে অংশগ্রহণকারীদের যখন অপ্রত্যাশিত দিক-নির্দেশ, গতি ইত্যাদি স্টিমিউলাই ট্র্যাক করতে বলা হয়েছিল, তখন গতিরোধ হয়েছিল মানুষের চোখের স্বাভাবিক চলনের। আচমকা ট্র্যাক করতে পারছিলেন না তাঁরা। যাঁরা রাত জেগে কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা করে ফল পাওয়া গেছে বিস্তর।
"মানুষের চোখের চলাফেরার বিভিন্ন ধরণ দেখে আমরা কেবল নিদ্রাহীনতা শনাক্ত করতে পারি তা নয়, এটি অ্যালকোহলের ব্যবহার বা মস্তিষ্কের আঘাতের মত অন্যান্য কারণ থেকেও আলাদা করতে পারি, যা আমরা এর আগে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করে দেখিয়েছি", গবেষণার সিনিয়র অথার লি স্টোন বলেছেন। এমন অভিনব পরীক্ষা ইতিহাসের পাতায় হয়ত নতুন। তবে শুধু গবেষণা বা পরীক্ষা করে সমস্যা শনাক্ত করাই নয়, এর সমাধানও প্রয়োজন। তার দায়িত্ব প্রত্যেকের নিজেদেরই থাকা উচিত।