একটি কিশোরের জীবন কিভাবে গোটা জগৎ প্রতিনিয়ত আঘাতে জর্জরিত করে দেয়, সেটা বোঝালেন পরিচালক ভাকলাভ মরহুল। ম্যাটিনি শো'তে 'দ্য পেইন্টেড বার্ড' আশাহত করল না। নিষ্ঠুর দুনিয়া দেখানোর পাশাপাশি, প্রোটাগনিস্ট জিউইশ কিশোরের মধ্যে দিয়ে পরিচালক সততার চিহ্নও এঁকে দিয়েছেন তাঁর ছবিতে। টাটকা ছবিটি বেশ কয়েকটি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল-এ দর্শকদের মন জয় করেছে। জেনেছিলাম বিশেষ করে জার্নালিস্টদের প্রশংসা কুড়িয়েছে ছবিটি, তাই দেখার ইচ্ছে ছিল। এত নিষ্ঠুরতা সাংবাদিকরা ছাড়া সাধারণ মানুষের পক্ষে হজম করা কঠিন। মাঝে মাঝেই জোর ধাক্কা দিয়েছেন পরিচালক। তবু কলকাতা তো, প্রেক্ষাগৃহ ছিল পরিপূর্ণ। কিছু দর্শক যদিও মাঝপথে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু দেখার দর্শকের সংখ্যাই ছিল বেশি।
কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রথম দিনে নন্দন-১ এর ম্যাটিনি মন ভরিয়ে দিল। 'বুলবুল' -কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নন্দন-রবীন্দ্রসদন চত্বর ছিল ভিড়ে ঠাসা। রীতিমতো লাইন দিয়ে ঢুকতে হয়েছে হলে। চারদিকে বুলবুল-এর আতঙ্ক। ছিল অযোধ্যার রায়, কিন্তু কলকাতা ছিল কলকাতাতেই। উৎসব চত্বরে কে বলবে, বাইরে এমন থমথমে জগৎ?
ছবি দেখতে আসা সৌমজিৎ ব্যানার্জী কে জিজ্ঞেস করলাম, কোন কোন ছবি দেখলে? কোন কোনটা ভালো লাগলো? সৌমজিতের কাছ থেকে জানতে পারলাম, ও মোট তিনটে ছবি দেখেছে। বললো, "মরহুল-এর 'দ্য পেইন্টেড বার্ড' এবং বর্গম্যান-এর 'রেসিন' ভালো লেগেছে তবে গৌতম হালদারের 'নির্বাণ' ভালো লাগেনি, একেবারে টেলিফিল্ম"। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, সৌমজিৎ চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে কম-বেশি যুক্ত রয়েছে, ২৪-২৫ বছর বয়স কিন্তু বেশ সিনেমা বোদ্ধা বলে মনে হল কথাবার্তা শুনে। কথা বললাম একজন শর্ট ফিল্ম নির্মাতা তথা সিনেমা বিষয়ক শিক্ষক দেবজিৎ বাগচির সঙ্গে। দেবজিৎ আজকে মোট চারটি ছবি দেখেছেন। পরিচালক মেলিনা লিয়ন-এর 'সং উইদআউট এ নেম' এবং পেদ্রো কোস্তা'র 'ভাইটালিনা ভ্যারেলা' যথেষ্ট ভালো লেগেছে। তিনি আরও বললেন, "পেদ্রো কোস্তা স্ট্যাটিক ইমেজের রাজা, তাই ওই ধরনের ছবি দেখার ব্যাপারই আলাদা। 'স্ট্রং উইদ আউট এ নেম' সাদা-কালো, তাই সেই ছবি আলাদা গুরুত্ব দাবি করে"। দেবজিৎ এর মেহেদি বারসৌলি-র ছবি 'ইভেন আ সন' ছবিটিও ভালো লেগেছে।
বাড়ি ফেরার সময় মনটা ভালো হয়ে গেল সকলের সঙ্গে কথা বলে। 'বুলবুল' আমাদের কেমন বুলবুলভাজা খাওয়ায় সেটা সারা রাত অতিবাহিত না হলে হলফ করে বলা যাবেনা, কিন্তু আগামী কালও যে উৎসব থাকবে উৎসবেতেই তা হলফ করে বলাই যায়।