শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে দেশ জুড়ে পালিত হয় নাগ পঞ্চমী। বলা হয় এই বিশেষ দিনটিতে নাগ দেবতার পুজো করলে কালসর্প দোষ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। অনেকে রুপোর সাপ দিয়ে পুজো দেন এই দিনটিতে। অষ্ট নাগের পুজো করা হয়। বাসুকি নাগ, অনন্ত নাগ, পদ্মা নাগ, মহাপদ্ম নাগ, তক্ষক নাগ, শীতল সাপ, কর্কট সাপ, শঙ্খ সাপ, কালিয়া নাগ, পিঙ্গল সাপ। অষ্ট নাগের মধ্যে শেষ দুই নাগও পড়ে। আট সাপকে দেবতা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
নাগপঞ্চমীর উদযাপনে উজ্জয়িনীর নাগ চন্দ্রেশ্বর মন্দিরের মাহাত্ম্য আলাদা। সারা বছরের মধ্যে শুধুমাত্র নাগপঞ্চমীর দিনেই ভক্তদের জন্য খোলে এই মন্দিরের দরজা।
প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে নাগপঞ্চমী তিথিতেই কেবলমাত্র এই মন্দিরের ভিতর প্রকট হন নাগরাজ তক্ষক। আর সেদিনই তিনি ভক্তদের আশীর্বাদ দেন। মন্দিরে নাগ শয্যায় শুয়ে থাকেন শিব। এই বিরলমূর্তি দেখা যায় শুধু আজকের দিনেই। বিশ্বের একমাত্র এই মন্দিরেই এই মূর্তি দেখা যায়।
ভারতের উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ জেলায় হিন্দুদের অন্যতম প্রাচীন তীর্থক্ষেত্র প্রয়াগরাজ। সেখানে আছে নাগরাজ বাসকী'র মন্দির।
মহাভারত অনুযায়ী সর্পকুলের রাজা বা নাগরাজ বাসুকি। বাসুকি শিবের গলা ঘিরে থাকে। বাসুকির বোন মনসা। সমুদ্র মন্থনের সময় দেবতারা বাসুকিকে রজ্জু হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। মেরু পর্বতের চারপাশে জড়িয়ে দিয়ে মন্থন করা হয়েছিল। এর ফলে বাসুকি নাগের সারা শরীর রক্তে ভেসে যায়। এই সময় সমুদ্র মন্থন থেকে হলাহল বের হলে শিব তা গ্রহণ করেন। এই সময় বাসুকি নাগও ভগবান শিবের প্রতি ভক্তিতে সেই বিষ গ্রহণ করেছিলেন। বাসুকির ভক্তি দেখে শিব তুষ্ট হন ও গলায় জড়িয়ে নেন সেই সময়।
পুরাণ মতে, বিষ্ণু ও লক্ষ্মী বাসুকির ফনায় শয়ন করেন। বাসুকি তার ফনা রাজ ছত্রের মতো আচ্ছাদিত করে। বিষ্ণু পুরাণ মতে, বলরাম বাসুকির অবতার। বাসুকির অন্যান্য নাম―অনন্তশীর্ষ, অহিপতি, অহিরাজ, অহীন, অহীশ্বর, বাসুকি, শেষনাগ। বৌদ্ধ পুরাণে- বাসুকির উল্লেখ হয়েছে ধর্মীয় আসরে শ্রোতা আসনে।
উত্তর ও পশ্চিম ভারতে ভারতে নাগ পঞ্চমী পালিত হয় জাঁকজমক করে। গুজরাতে বেশ কয়েক দিন ধরে চলে উৎসব। নাগ চতুর্থীও অত্যন্ত জনপ্রিয় উৎসব। অন্ধ্রপ্রদেশের মতো দক্ষিণী রাজ্যে নাগ দেবতার পুজো হয় দেওয়ালির পরে।