শহর থেকে অনেকটা দূরে নাগাল্যান্ডের পূর্বাঞ্চল হিমালয়ের গ্রাম ভিস্যেমা। উত্তর-পূর্বে এর অখ্যাত গ্রামকে নাগাল্যান্ডের মানুষ আলাদা করে চেনে পটারি আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য। প্রায় আট হাজার মানুষের বাস।
পাহাড়ের গায়ে গায়ে চাষ করে। এছাড়া পাথরের বাড়ির ছাদে ফসল ফলানে হয়।
ভিস্যেমার একটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা স্কুল চত্বরের মধ্যেই সবজি উৎপাদন করে চমকে দিয়েছে গোটা উপত্যকাকে।
মিড-ডি মিলে রান্নার জন্য ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই সবজি ফলাচ্ছে। রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়না।
স্কুলের প্রধান কানাইসেনু ভেসু অনুপ্রেরণায় প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা স্কুলের সীমানার মধ্যেই ফল, সবজি উৎপাদন করে চমকে দিয়েছে। স্কুলের ৬০ জন ছাত্রছাত্রী সরাসরি জড়িয়ে এই উদ্যোগের সঙ্গে।
বাঁধাকপি, কুমড়ো, স্কোয়াশ, বেদানা, কমলালেবুতে সেজে উঠেছে স্কুলের বাগান।
উৎপন্ন ফসল মিড-ডে মিলে রান্নার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আর বাড়তি সবজি বানিজ্যিক ভিত্তিতে বিক্রি করে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
স্কুলেই ছাত্রছাত্রীদের অরগ্যানিক ফার্মিং- এর প্রশিক্ষণ দেওয়ার ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছিল প্রায় এক দশক আগে। নেপথ্যে কানাইসেনু ভেসু।
তাঁর কথায়, ‘ ২০১১ সালে আমরা ঠিক করেছিলাম ছাত্রছাত্রীদের অরগ্যানিক ফার্মিং’- এর পাঠ দেওয়ার। শ্রমের গুরুত্ব এবং পরিবেশ সচেতনা দুই দিকেই নজর দেওয়া হয়েছিল। মাঠে হাতে কলমে কাজ কৃষির পাঠ নেওয়ার পাশাপাশি ক্লাসঘরে সিলেবাসের পড়াশোনা, পরীক্ষার চাপ। কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা পুরো বিষয়টা বেশ ভাল ভাবে গ্রহণ করেছিল। শুরু থেকেই তাদের আগ্রহ ছিল দেখার মতো’।
স্কুলের পিছনে পরিতক্ত জমিকে চাষের উপযোগী করে তোলে তারা। প্রত্যেকদিন স্কুলের ধরাবাঁধা ক্লাসের পাঠ শেষ হয়ে গেলে তারা সবজির বাগানে জড়ো হত। তিনটি দলে ভাগ হয়ে কাজ শুরু হত দিনের কাজ। নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতাও হত।
ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ দেখে স্কুলে শুরু করা হয়েছে ইকো-ক্লাব। এলাকায় নিয়মিত পরিবেশ সচেতনতামূলক কর্মসূচী নিয়ে থাকে তারা।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্কুল চত্বরেই ‘অরগ্যানিক ফার্মিং’ এর ভাবনা চিন্তা আরও বেশি করে বাস্তবায়িত হচ্ছে। তবে উত্তর-পূর্বে এই প্রচেষ্টা এখানেই প্রথম। এই স্কুলের কর্মকান্ড দেখে অনেকেই উৎসাহিত হচ্ছে।