‘হাতে একটুও সময় নেই, কে এখন বসে বসে তালের বড়া ভাজবে। কত হ্যাপা! তাল ছানো রে...এটা সেটা পরিমাণ মতো মেশাও রে...ভাজো রে...তারপরও টেনশন- বেশি শক্ত বা নরম হয়ে যাবে না তো! নাড়ু বা মালপোয়াতেও কমবেশি একই ঝামেলা। ঠাকুরকে দেওয়া নিয়ে তো কথা। তাছাড়া দোকানের গুলো তো বেশ ভালোই...’
জন্মাষ্টমীর প্রাক্কালে নিজের বাড়ি হোক বা পাড়া-প্রতিবেশী, কান পাতলেই শোনা যায় এই কথাগুলোই। প্রতিমূহুর্তেই বদলে যাচ্ছে জীবন আর যাপনের সংজ্ঞা। ‘আগে কি হত, আর এখন কি হয় না’ -এ নিয়ে আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক চলতেই থাকবে। জনজীবন, সমাজজীবনে সময়কে মুষ্ঠিগত করার প্রবণতা চিরাচরিতভাবেই চলে আসছে। হিউম্যান নেচার। তাই ঠাকুমা-দিদা-মা-মাসি অর্থাৎ বাড়ির স্বজনদের হাতের জাদুতে মোহিত হওয়ার স্মৃতিসুধা সঙ্গে নিয়েই আমাদের অভ্যস্ত হয়ে পড়তে হয়েছে-হচ্ছে ‘রেডিমেড’-এ। না, ‘রেডিমেড’-এর উপকারিতা বা অপকারিতা নিয়ে এ লেখা নয়।
আজ শুভ জন্মাষ্টমী। শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি। সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। পঞ্জিকা অনুসারে, সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে রোহিণী নক্ষত্রের প্রাধান্য হলে জন্মাষ্টমী পালন করা হয়। দেশজুড়ে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে এ দিনটি পালন করে হিন্দু সম্প্রদায়। জন্মাষ্টমীর ভোগ হিসেবে প্রধানত নিবেদন করা হয়, তালের বড়া, ক্ষীর, বিভিন্নধরনের নাড়ু, মালপোয়া, ননি। পুরাণ অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণ বাল্যকালে এইগুলোই খেতে বেশি পছন্দ করতেন যে! বাড়িতে এই ভোগ বানানোর হ্যাপা এড়াতে এবং নতুন চমক হিসেবে বাজারে দেদার বিকোচ্ছে জন্মাষ্টমীর নানা পদ। দোকানে দোকানে রীতিমত উপচে পড়ছে ভিড়।
জন্মাষ্টমীকে কেন্দ্র করে রেডিমেড বড়া, নাড়ু’র ‘ক্রেজ’ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শুধু এই উৎসব উপলক্ষেই কয়েক দিনের জন্য পসরা সাজিয়ে বসছেন খুচরো ব্যবসায়ীরা। তাঁদের কথায়, ‘মানুষের সুবিধাও হল, আমাদেরও একটু রোজগার হল।'
অন্যদিকে, ক্রেতাদের কথায়, সময় বদলেছে। আগে পরিবারে অনেক সদস্য থাকত। সবাই হই হুল্লোড় করে বাড়ির যেকোনও আচার-অনুষ্ঠানে যোগদান করত। ছোট্ট গোপালের মত বাড়ির খুদে সদস্যদের কথা মাথায় রেখে বাড়ির বড়রা বিশেষ ভালোবাসার ছোঁয়া রাখতেন রান্নায়। বাড়ির পুরুষদের মত মহিলাদের তখনও বাইরে বেরনো, সংসারের অর্থনৈতিক দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার পরিসর তৈরী হয়নি। সেসব এখন অতীত। এখন সবাই কোনও না কোনওভাবে সময় বাঁচাতে চান। সেক্ষেত্রে ‘রেডিমেড’-এর উপরেই একচেটিয়া নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে জনজীবন।