দেশ গাঁয়ের গোয়ালঘর। ভোর হতে না হতেই দারুণ শোরগোল। রাতে নাকি দুধরাজ এসেছিল। দুধ খেয়ে গিয়েছে গাভীর। দাঁতের দাগ বলে দিচ্ছে সে এসেছিল।
দুধ রাজ কোনও দেবতা বা অপদেবতা নয়। গাঁ-ঘরে অত্যন্ত পরিচিত। তামাটে রঙের এক সাপ। হঠাৎ দেখলে অবশ্য মনে হয় হবে সাদা। আলো পড়লে কখন গাড় তামাটে, কখনও হালকা। গায়ে কালো দাগ থাকে। লম্বায় প্রায় ১৫২ সেন্টিমিটার।
খুব রাগী এবং হিংস্র, প্রচন্ড রেগে গেলে বা ভয় পেলে কামড় দেয়। তবে নির্বিষ। রেগে গেলেই এদের দেহের আকৃতি বদলে যায়। গোলাকার থেকে চ্যাপ্টা আকার নেয়। দেহ ‘এস’ অক্ষরের মতো পেঁচিয়ে নেয়।
গোয়াল ঘরে, মাঠে ঘাটে দেখা যায় দুধরাজকে। গোয়ালঘরে ইঁদুরের লোভে মাঝে মাঝেই হানা দেয় দুধরাজ। পা পেঁচিয়ে দুধ খেয়ে যায় গাভীর। সেই ভয়ে তটস্থ থাকে মানুষ। চোখে পড়লেই দেখলেই মানুষের হাতে তার মৃত্যু অবধারিত। কিন্তু সত্যিই কি দুধ খায় দুধরাজ?
সাধারণের মধ্যে যতই প্রচলিত ধারণা থাকুক যে সাপ দুধ খায় এ ধারণা আসলে একেবারেরই ভ্রান্ত। শুধু দুধরাজ কেন, কোনও সাপই দুধ খেতে পারে না। সাপের জিভ চেরা তাই তারা ব্যাঙ, ইঁদুর, পাখি, আস্ত ছাগল কিংবা হরিণ গিলে আত্মস্থ করতে পারলেও দুধ নয়।
দুধরাজ তাই শুধুমাত্র ইঁদুরের লোভেই গোয়াল ঘরে হানা দিয়ে থাকে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে দুধরাজ অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। রবিশস্যের কিন্তু মানুষের অমূলক ভয়ের জেরে দুই বাংলাতেই দুধরাজ আজ অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে।
দুধরাজ ভারত ছাড়াও চীন, কম্বোডিয়ার মতো দেশেও দেখা যায়।