মহাতীর্থ গঙ্গাসাগর

পৌষ মাসের মকর সংক্রান্তিতে সূর্য ধনু রাশি থেকে মকর রাশিতে প্রবেশ করে। এই সংক্রান্তি ‘মকর সংক্রান্তি’ নামে পরিচিত। মকর দিবসকে আবার ‘উত্তরায়ণ সংক্রান্তি’-ও বলে। এই দিনটি থেকেই সূর্য উত্তরায়ণের দিকে যাত্রা শুরু করে। ভারতে দিনটি অত্যন্ত বিশেষ। মানুষের বিশ্বাস সংক্রান্তির দিন মাহেন্দ্রক্ষণে নদীতে অবগাহন করলে রোগমুক্তি ঘটে। আয়ু বৃদ্ধি পায়। গঙ্গা, যমুনাসহ দেশের সমস্ত সঙ্গমস্থলেই এই দিনটিতে পুণ্যার্থীদের আগমন ঘটে। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে যায় বাংলার গঙ্গা সাগর।
স্কন্দ পুরাণে আছে- মানব সকল তীর্থ দর্শন, দান, তপস্যা, দেবপূজা, যজ্ঞাদিতে যে ফল লাভ করেন, তা একমাত্র গঙ্গাসাগর সঙ্গমে স্নানে লাভ হয়- “লভতে পুরুষঃ সর্ব্বং স্নাত্বা সাগর সঙ্গমে।”

পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণসাগরে দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত কপিলমুনির আশ্রমে মকর সংক্রান্তি তিথিতে গঙ্গাসাগরে স্নানের জন্য দেশের নানা প্রান্ত থেকে সাধু-সন্ন্যাসীম, পুণ্যকামী মানুষ আসেন। মহাভারতের বনপর্বেও তীর্থযাত্রা অংশে গঙ্গাসাগর তীর্থের কথা বলা হয়েছে।

 

Gangasagar1

কথিত আছে ইক্ষাকু বংশের রাজা রামের পূর্ব পুরুষ সগর অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করেন। তিনি ৯৯ বার অশ্বমেধ যজ্ঞ করেছিলেন| শততম যজ্ঞের সময দেবরাজ ইন্দ্র ইর্ষান্বিত হযে যজ্ঞের ঘোড়াটি অপহরণ করে কপিল মুনির অজান্তেই আশ্রমে রেখে গেলেন| রাজার ষাট হাজার সন্তান ঘোড়া খুঁজতে এসে উপস্থিত হন আশ্রমে। না বুঝেই তাঁরা মুনিকে অপরাধী সাব্যস্ত করেন। তখন কপিলমুনি রেগে গিয়ে তাঁদের অভিশাপ দেন এবং তাঁরা ভস্মীভূত হয়ে যায়। সগরের পৌত্র অংশুমান কপিলের কাছে এসে প্রাণ ফিরিয়ে দেওযার আকুতি জানান।  কপিল ঋষি তখন বলেন, স্বর্গের নদী গঙ্গা নেমে এসে তাঁদের স্পর্শ করলে তবেই তাঁর দগ্ধ পূর্বপুরুষরা প্রাণ ফিরে পাবেন|

পরবর্তী সময় সগরের পৌত্র ভগীরথ মহাদেবকে তুষ্ট করে স্বর্গ থেকে পতিত পাবনী গঙ্গাকে মর্ত্যে নিয়ে আসেন। জাহ্নবী ধারায় সগরপুত্রদের ভস্মাবশেষ ধুয়ে ফেলেন এবং এভাবেই তাদের আত্মা মুক্তিপ্রাপ্ত হয়।

গঙ্গাসাগর সঙ্গমে মকর স্নানের বিশেষ মন্ত্র, যথা-
“ত্বং দেব সরিতাং নাথ ত্বং দেবী সরিতাম্বরে।
উভয়োঃ সঙ্গমে স্নাত্বা মুঞ্চামি দুরিতানি বৈ।।”

মহাভারতের উক্তি অনুযায়ী, মানুষ গঙ্গাসাগর সঙ্গমে স্নান করলে অশ্বমেধযজ্ঞের দশগুণ ফল লাভ করে।
লবংশের রাজা দেবপালের একটি লিপিতে তার গঙ্গাসাগর-সঙ্গমে ধর্মানুষ্ঠান করার কথা বলা হয়েছে। ষোড়শ শতকের প্রাচীন পুঁথির তীর্থতত্ত্বপ্রদায়িনীতে কপিল মুনির মন্দিরের উল্লেখ রয়েছে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...