বাঁকে বিহারীর মন্দির রহস্য

লোকালয় থেকে খানিক দূরে এক মন্দির। বন তুলসির বনে ঢাকা। দিনের বেলা সেই আর পাঁচটা মন্দিরের সঙ্গে এই মন্দিরের বিশেষ তফাৎ পাওয়া যায় না। কিন্তু মন্দির বদলে যায় রাতের বেলা। জন মানুষহীন চত্বর থেকে ভেসে আসে নূপুর ধ্বনি। পূর্ণিমার রাতে অপার্থিব তার রূপ। কিন্তু মন্দিরের ধারে কাছে যাবার উপায় নেই। তাহলেই নাকি বোবা, পাগল হয়ে যেতে হয়! এমন কি মৃত্যুর ঘটনায় শোনা গিয়েছে!

কারণ এই মন্দিরে যে স্বয়ং মুরলীধারীর বাস!

 

Nidhivan2

 

গল্প কথা নয়, সত্যি সত্যিই আছে এমন মন্দির। মন্দির ঘিরে তৈরি হওয়া রহস্যের আজও কোনও সমাধান হয়নি। মানুষের বিশ্বাস প্রতি রাতে কৃষ্ণ স্বয়ং আসেন এই মন্দিরে। রধা আর গোপ সখীদের সঙ্গে রাসলীলা রচনা করেন।

বৃন্দাবনের গোপীনাথবাগে নিধিবন। সেখানেই নাকি শ্রীরাধা এবং সখীদের সঙ্গে রাস উৎসব করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। নিধিবন শব্দের মানে ‘তুলসী বন’। এখানেই অবস্থিত নিধিবন মন্দির। আরাধ্য দেবতা বাঁকেবিহারী।

 

Nidhivan1

 

মুরলীধর, কানহা, গিরিধর, লীলাধর-  নামেও জনপ্রিয়। শ্রীকৃষ্ণ বিষ্ণুর অষ্টম অবতার। বৃন্দাবনের রহস্যময় মন্দির নিধিবন। বলা হয় প্রতি রাতে কৃষ্ণ ফিরে আসেন এই মন্দিরে। এখানেই রাধা আর গোপীদের সঙ্গে রাসলীলা সাধন করেন। এই মন্দির বন তুলসি গাছে ঢাকা। ভক্ত হরিদাস স্বামী কৃষ্ণ প্রেমে মগ্ন হয়ে থাকতেন। তাঁকে এই স্থানেই দেখা দিয়েছিলেন শ্রীরাধা আর কৃষ্ণ। পরে তাঁরা একই অঙ্গে লীন হয়ে বাঁকে-বিহারী রূপ নিয়ে প্রিয় ভক্ত হরিদাস ঠাকুরের সঙ্গে রয়ে যান। পরবর্তী সম য়ে নিধিবনে মন্দির গড়ে উঠলে তাঁদের আলাদা আলদা রূপে স্থাপন করা হয়।  

মন্দিরে ভিতরে রঙমহল। সন্ধ্যা আরতির পর মন্দিরের সেবায়ত এবং পুরোহিতরা সেখানে প্রতিদিন নিম ডাল, শাড়ি, চুড়ি, পান পাতা, মিষ্টি, জলপাত্র রেখে আসেন। সকালে দ্বার খোলার পর দেখে মনে হয় সেসব কেউ ব্যবহার করেছে। চন্দন কাঠে তৈরি শয্যাও আছে রঙমহলে।

 

Nidhivan3

 

মন্দিরে রাধা কৃষ্ণের লীলার কারুকাজ। ভিতরে বাঁকে বিহারীর বিগ্রহ। সন্ধ্যা আরতির পর মন্দির চত্বরে আর কারুর থাকার অনুমতি নেই। এমনকি বাঁদর বা কুকুর পর্যন্ত দেখা যায় না। মন্দিরের সমস্ত জানলা বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্থানীয় মানুষরাও এই পথ এড়িয়ে চলেন। কেউ কেউ নাকি রাতে নূপুরের আওয়াজও পেয়েছে।

নিধিবন বাঁকে বিহারির মন্দির নিয়ে আরও একটি কাহিনি শোনা যায়। এই মন্দির গড়ে উঠেছে রুক্ষভূমিতে। কিন্তু এই চত্বর জঙ্গল বনরাজিতে ঘেরা। তবে আশ্চর্যজনক ভাবে  আশেপাশের গাছের শাখা সবই নিম্নমুখী। মানুষের বিশ্বাস কৃষ্ণপ্রেমেই গাছের শাখা-প্রশাখা নতমুখী। এই গাছগুলোই গোপীনিতে পরিবর্তিত হয়ে যায় পরে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...