রহস্যের ঠেক হ্যাং সন ডুং

সভ্যতার আদি লগ্নে আদিম মানুষের একমাত্র নিরাপদ ঠাঁই ছিল গুহা। গুহায় বসবাসকারী বণ্য প্রাণীকে মেরে আদিম মানুষেরা গুহায় বসবাস শুরু করেছিল। এভাবেই তারা গুহা মানব হয়ে ওঠে। বর্তমানেও পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে ছোট বড় বহু গুহা। এর মধ্যে কিছু উন্মুক্ত প্রকৃতির আবার কিছু বদ্ধ। পর্বত আবিষ্ট এই সকল গুহা গুলি এক একটি বহু প্রাচীন। শুধু তাই নয় অনেক ক্ষেত্রে এই সকল গুহা স্বভাবতই ভয়ংকর। ঠিক এইরকমই এক ভয়ংকর গুহা নিয়ে আজকে আলোচনা করব, বর্তমান যা বিশ্বের সর্ব বৃহৎ গুহা হিসাবে পরিচিত। নাম ‘হ্যাং সন ডুং’। 

               ১৯৯১ সালে হো খানহ’ নামের এক ব্যক্তি এই গুহাটি প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন। শোনা যায় হো খানহ নামক এই ব্যাক্তি জঙ্গল থেকে খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে এই গুহার আশ্রয় নিতেন। ভিয়েতনামের কোং বিন’ প্রদেশের, বো টাচ’ জেলায় এই হ্যাং সন ডুং গুহার ভৌগলিক অবস্থান। তবে এই গুহাকে ঘিরে বেশ কিছু রহস্য আছে। গুহাটি বহু বছর আগে আবিষ্কৃত হলেও তা এখনো পর্যন্ত সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত নয়। এই গুহাটির মূলত ২টি প্রবেশ পথ রয়েছে। হ্যাং সন ডুং-এর সর্ব বৃহৎ কক্ষের উচ্চতা ২০০ মিটার এবং চওড়ায় ১৫০ মিটার, মোট আয়তন প্রায় ৫ কিলোমিটার। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম গুহা রূপে পরিচিত। গবেষণায় দেখা গেছে এই গুহাটি আনুমানিক ৩৬০ মিলিয়ন বছর প্রাচীন কার্বোনিফেরাস যুগে সৃষ্ট। এই বৃহৎ গুহাটির দেওয়াল তৈরী হয়েছে চুনাপাথর থেকে। যার ভিতরে রয়েছে স্ট্যালাগমেইট নামক এক বিশেষ খনিজ পদার্থ দিয়ে তৈরী বহু প্রকান্ড স্তম্ভ যা গুহার ছাদ ও মেঝেকে সংযুক্ত করেছে।

              ২০০৯ সালে ব্রিটিশ গুহা গবেষণা সংগঠন থেকে হ্যাং সন ডুং গুহার গবেষণার ক্ষেত্রে পরিমাপ করতে পারলেও এই গুহাটির শেষ খুঁজে পায়নি। আরো রহস্যের বিষয় এই গুহাটি মোট ১৫০টি গুহার সমন্বয়ে গঠিত। গবেষনার সময় এখানে বিষধর সাপ, বিছে, পোকা, বড় মাকড়সা সহ দেখা মেলে বহু বিচিত্র প্রানীর। যা স্বভাবতই গবেষকদের বিপদে ফেলে। এখানেই শেষ নয়, এই গুহার ভিতরে রয়েছে ছোট ছোট জলের ফোয়ারা। রয়েছে বহু সুরঙ্গ পথ যা অনুসরণ করলে সহজেই ভিয়েতনামের এক স্থান থেকে অন্যত্র যাওয়া সম্ভব। হ্যাং সন ডুং –র ভিতরে গেলে নীচের দিকে দেখতে পাওয়া যায় দীর্ঘ নদী যা থেকে গুহার ভিতরে তৈরী হয় মেঘ, আরও দেখা যায় একাধিক ঘন জঙ্গল ঘেরা পরিবেশ। যেখানে রয়েছে চেনা অচেনা বহু বৃক্ষাদি। সব মিলিয়ে এখানে থাকে গুহার নিজস্ব জলবায়ু যা বাইরের জগত থেকে সম্পূর্ণ রূপে ভিন্ন। 

                  এই সকল কারণেই এই গুহা বিপদজনক ও রহস্যময়। সবশেষে বলা যায় হ্যাং সন ডুং গুহার কথা বলতে গিয়ে মনে পড়ে যায় এরিক ব্রেভিং পরিচালিত ২০০৮ সালের মুক্তি প্রাপ্ত ছবি ‘Journey to the Center of the Earth’ –এর কথা। যেখান পুরো সিনেমাটাই হ্যাং সন ডুং –এর ন্যায় একটি গুহাকে ঘিরে। 

       

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...