মিউজিক থেরাপি নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেক গবেষণা হয়েছে। সমগ্র বিশ্বে বিভিন্নবার এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, সংগীতের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগের নিরাময় সহ অনেক অসাধ্য সাধন করা সম্ভব। এমনই একটি ঘটনা অবাক করেছে ডাক্তার মহলে। গত ২৭ তারিখে ধুম জ্বর এসেছিল নৈহাটির সংগীতা দাসের। ৩০ তারিখ ডেঙ্গি ধরা পড়ে। কিন্তু এমআরআই এবং সুষুম্নারস পরীক্ষা করে দেখা যায়, ওর মস্তিষ্কের দু'দিকেই রক্তক্ষরণ হয়েছে এবং মেনিংগো-এনসেফ্যালাইটিস হয়েছে। মরে গিয়েছে বহু কোষ। এর আগে পূর্ণবয়স্কদের মধ্যে এমন জটিলতার নজির এ পর্যন্ত দেশে আর একটিই। ২০১২ সালে সেই রোগীকে বাঁচাতে পারেনি এইমসও। সঙ্গীতার দেহে সংক্রমণ এবং রক্তক্ষরণের জন্যে মস্তিষ্কের প্রচুর কোষ মরে গিয়েছে। শুধুমাত্র থ্যালামাস ছাড়া আর কিছুতেই সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। সেই সময়েই শুরু হয় মিউজিক থেরাপি। জীবনদায়ী ওষুধের সঙ্গেই চলেছে মিউজিক থেরাপি। আধ ঘন্টা করে দিনে তিন বার সেই ওষুধেই গভীর কোমা থেকে ফিরে এসে আবার জীবনের দরবারে কড়া নাড়তে শুরু করেছেন সংঙ্গীতা। পন্ডিত এন রাজনের বেহালায় বাজানো দরবারি কানাড়ায় আস্তে আস্তে সাড়া দিতে শুরু করছেন তিনি। এসএসকেএম-এর আইটিইউ ইনচার্জ রজত চৌধুরীর আশা, এবারে হয়ত সেরে উঠবেন সংঙ্গীতা। সংঙ্গীতা যখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আসেন, তখন তার এমন অবস্থা ছিল, তার চিকিৎসা ঠিক কিভাবে করলে সঠিক দিকে যাওয়া যাবে তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন রজত বাবু। তিনি জানান, তাঁর বন্ধু ওই হাসপাতালেরই কার্ডিয়াক এনাস্থেশিয়ার শিক্ষক-চিকিৎসক সন্দীপ কর তাঁকে মিউজিক থেরাপির পরামর্শ দেন। তিনিই বেছে দেন ঠিক কি শোনাতে হবে। কারন ইতিমধ্যেই দরবারী কানাড়ার সুফল প্রমাণিত।
এবং সেই মতোই ফল পাওয়া গেল। শুক্রবার, ৭ ডিসেম্বর আইটিইউ-এর পাঁচ নম্বর বেডের আধশোয়া সঙ্গীতাকোমা থেকে বেরিয়ে চোখ মেলে দেখছেন। হাত-পা ও সামান্য নাড়তে পারছেন। ঘাড় ঘোড়াতে পারছেন। খুলে দেওয়া হয়েছে ট্র্যাকিওস্টমির টিউব, এমনকি রাইলস টিউব ও। বাবার হাতে এ দিনই প্রথম তরল খাবার খেলেন আর পাঁচ জনের মতোই। ডাক্তার এবং তার পরিবার উভয়েই খুশি। আবারও প্রমাণিত হল মিউজিক থেরাপিতে অসাধ্য সাধন হতে পারে।