সঙ্গীতের মহারাজ ‘ইলাইয়ারাজা’

ক্লাস এইটে পড়তে পড়তে পড়তে থামিয়ে দিতে হয়েছিল স্কুল যাওয়া। বাড়িতে টানাটানির সংসার। স্কুল যাওয়া যেন বাড়াবাড়ি।
তখন কে জানত এই ছেলেই একদিন বিশ্বের সেরা কলেজ থেকে সেরা ছাত্রের ডিগ্রি পাবে। মিউজিকে ডিপ্লোমা ট্রিনিটি কলেজ থেকে। ক্ল্যাসিক্যাল গিটারে গোল মেডেল।

ঘুরে দাঁড়ানো বোধহয় এগিয়ে বলে। ছেলেটিকে পরে পৃথিবী চিনেছিল ‘ইলাইয়া রাজা’ নামে। নামেও কাহিনী।
সে কাহিনী নয় একটু পরেই শুনবেন। আগে একটু শুরুর গল্প শোনা যাক।

কাদামাটি বেলা থেকেই গায়ে জড়িয়েমড়িয়ে গিয়েছিল মেঠো সুর। তামিলনাড়ুর প্রত্যন্ত গাঁয়ে জন্ম। লোকসঙ্গীতের সহজ সুরে মেতে থাকত শৈশব।
দাদা পাভলার ভরদারাজন গান করতেন। মঞ্চে অনুষ্ঠান হত। বহু মানুষ শুনতে আসতেন তাঁর গান।
একবার হল কী, অনুষ্ঠানের দিনই পাভলার পড়লেন অসুস্থ হয়ে। মা জোর করে পাভলার জায়গায় পাঠিয়ে দিলেন ছোট ছেলেকে। দফার অনুপস্থিতিতে গান করতে গেলেন ইলিয়া। কিন্তু খুব সমস্যায় পড়লেন না। দাদার জন্য গাইলেন সেদিন দাদার সুস্থতা চেয়ে ভাইয়ের গান । মুগ্ধ দর্শক-শ্রোতা।

ভাইয়ের এহেন কীর্তিতে দাদারও খুশির শেষ নেই। তারপর থেকে পাকাপাকি দাদার চ্যালা হয়ে গেলেন। পোশাকি ভাষায় সহকারী।
শুরু হল এক নয়া সফর।

কেরিয়ারের একেবারে গোড়ার দিকে দুটো শো করেছিলেন। দর্শকদের ভালবাসায় একেবারে টইটুম্বুর হয়ে ঘরে ফিরেছিলেন। ভুলতে পারেননি আজও।

বিশ্বের সেরা মিউজিক কম্পোজার। বিভিন্ন ভাষায় প্রায় হাজারের বেশি ছবিতে কাজ করেছেন।
কয়েক বছর আগে ছবি পরিচালক আর কল্কি বলেছিলেন, “ইলাইয়া রাজামানে মিউজিক, মিউজিক মানে ইলাইয়ারাজা”। কথাটা বাড়াবাড়ি নয় একটুও।

গানের জগতে ইলাইয়ারাজা সম্রাট। তাঁর মুখের একটি লাইন প্রবাদ হয়ে গিয়েছে। প্রায় স্লোগান বলতে পারেন।
‘ গিফ মি হাফ এন আওয়ার, এন্ড আই ক্যান ফিনিশ আ ফিল্ম’
মানে আমাকে আধঘন্টা সময় দিন একটা ছবি শেষ করে দেব!

জন্মের পর প্রথম নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ জ্ঞানদেশিকান’। স্কুলে ভর্তি সময় সেই নাম বদলে হয় ‘রাজাইয়া’।
জীবনের প্রথম ছবি রিলিজের সময় ফের বদলাতে হয় নাম। সেই সময় কন্নড় সিনেমার জগতে এএম রাজাই নামে আরও এক সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন। সেই নামের সঙ্গে যাতে মিলিয়ে না ফেলে অডিয়েন্স তার জন্যই এবারের নাম বদল। নতুন নাম ‘ইলাইয়া রাজা’।

গানের টানে ১৪ বছর বয়সে এক গানের দলে যোগ দেন। সক্রিয় সদস্য ছিলেন। মেইনস্ট্রিম ইন্ডাস্ট্রিতে আসার আগে বহু জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালকের সহকারীর কাজ করেছেন। তাঁর অন্যতম প্রিয় সঙ্গীত পরিচালক সলিল চৌধুরী।
নিজের সহকারী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন এ এর রহমানকে।

১৯৯০-এ তাঁর ‘ইসাইনানী’ নতুন ইতিহাস তৈরী করেছিল ভারতীয় গানে। প্রথম এশীয় হিসেবে লন্ডনের ‘রয়্যাল ফিলারমনিক অর্কেস্ট্রার’ জন্য একটা পুরো সুর তৈরি করেন। ১৯৯৩-তে ‘থালাপতি’ আর ‘রাক্কাম’ ওয়ার্ল্ড প্লে লিস্টের 'টপ টেন'-এ বহুদিন ছিল।

একটা গান তৈরিতে যা যা কাজ সবেতেই তিনি ‘মাস্টারব্লাস্টার’। শুধু মিউজিক কম্পোজ নয়, নতুন রাগ সৃষ্টি করেছেন কর্ণাটকী সঙ্গীতে। নাম ‘পঞ্চমুখী’।

৩০ বছরের বেশি কেরিয়ার। কিন্তু ইলাইয়ারাজা মানেই নতুন কিছু। প্রতিটা গানই নতুন কিছু...এটাই ইলাইয়ার নিজস্বতা।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...