“তুমি পারবে না” আর “তোমার পারা উচিত না” এই শুনতে শুনতেই বড়ো হয়েছেন তিনি। ছেলেবেলার খেলা, বন্ধুদের সঙ্গে মজা বা উচ্চ শিক্ষা সবেতেই বারবার এ সব কথা শুনতে হয়েছে তাঁকে। কখনও পরিবার তো কখনও দুনিয়া সকলেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে কখনও না কখনও। যে ভাবে আরও অনেক মেয়েই লড়াই করে, তাঁর লড়াইটাও ছিল তেমন।
এর পরেও জাতীয় স্তরের ‘হুইলচেয়ার বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়ন’-এর শিরোপা পেলেন তিনিই। গীতা চৌহান। সমাজের বানানো সমস্ত “না”-কে এক লহমায় আজ “হ্যাঁ”তে পরিণত করেছেন তিনি। বলছিলেন, সমাজের এই সব বানানো নিয়মকে কোনওদিনও পাত্তা দেননি তিনি। এক পায়ের জোরেই আজ হুইলচেয়ারে বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়ন তিনি।
মুম্বইতে পাঁচ বোনের সঙ্গে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মেছিলেন তিনি। পোলিও সংক্রমণের আগে পর্যন্ত স্বাস্থ্য ভালোই ছিল তাঁর। কিন্তু পোলিও সংক্রমণের পর থেকেই ভুল চিকিৎসায় আরও রুগ্ন হয়ে পড়তে থাকেন তিনি। কিন্তু নিজেই জানালেন, শরীরের চেয়েও সমাজের ভয় তাঁকে বেশি মাত্রায় গ্রাস করছিল।
কারণ? জানালেন, সেই সময়ে স্পেশাল স্কুলের ধারণা তেমন জনপ্রিয় ছিল না। কোনও রকমে মিউনিসিপ্যাল স্কুলে ভর্তি হন। প্রতি পর্বেই মায়ের ‘সাপোর্ট’ ছিল ব্যাপক। ক্লাস ১০-এর পর জুনিয়ার কলেজে ভর্তি হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাধা দেন তাঁর বাবা। বাধা দেন আত্মীয়রাও। কারণ, তাঁর কোনও ভবিষ্যৎ নেই।
তবু নাছোড় মেয়ে নিজেই নিজের পড়ার খরচ জোগান। খুঁজে নেন পার্ট টাইম কাজ। সে ভাবেই শেষ হয় তাঁর বি-কম ও এম-কম। এর পর, পাকা চাকরি খুঁজতে শুরু করেন তিনি। লড়াই করেতে করতেই দেখা হয় তাঁর প্রেমিক সুজিতের সাথে। প্রেম থেকে বিয়ে। তার পর ব্যাঙ্গালোরে স্থানান্তর। এক নাগাড়ে বলে চলেন গীতা।
কিন্তু এর পরেও বদল আসে জীবনে। মৃত্যু হয় তাঁর স্বামীর। সেখান থেকে ফের লড়াই। ২০১৭ সালে চাকরি ছাড়া। নিজের ব্যবসা শুরু করা। এভাবে কোনওক্রমে আটকানো নিজের ডিপ্রেশান। এবং ক্রমশ বাস্কেটবল টিমে অংশগ্রহণ। ধীরে ধীরে ভারতীয় দলের সদস্য হয়ে ওঠা। এখনও পর্যন্ত ৪টি স্বর্ণ পদক জিতেছেন তিনি।
পরিশেষে বললেন, "বারবার আমাকে সমাজ বাধা দেবে আমি জানি। প্রথমত, আমি একজন প্রতিবন্ধী বলে। দ্বিতীয়ত, আমি মেয়ে বলে। কিন্তু আমার মতো আরো অনেকেই যদি সেই সব বাধা ভেঙে এগিয়ে আসেন, তবেই তৈরি হতে পারে একতা, অন্য সমাজ।যা আমাদের স্বপ্ন।"