শীতের বাজারে নতুন সবজি উঠলে নজর কাড়ে সাদা ধবধবে মূলো। দেশের অন্যান্য প্রান্তে বারোমাস পাওয়া গেলেও বাংলায় মেলে শীতকালে।
সবজি খাদ্যবস্তু হিসেবে ব্যবহার হলেও দেবদেবীর অর্ঘ্যে স্থান পেয়েছে এই সবজি। অনেকেই আছেন মা কালী বা গৃহ দেবতাকে পৌষমাসে নিবেদন করেন। কালীঘাট থেকে শুরু করে বহু কালীমন্দিরে পৌষমাসে জোড়া মূলো উৎসর্গ করতে লম্বা লাইন পড়ে।
তার আগে অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লাষষ্ঠীর দিন মূলা ষষ্ঠী পালিত হয়। এই উদযাপনেরও একটি গল্প আছে।
কী সেই গল্প?
এক দেশে এক ব্রাহ্মণ বাস করত। স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে তার সংসার। কেটে যায়। বাড়িতে দাস-দাসী নিয়ে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটে।ব্রাহ্মণের একদিন খুব মাংস খাওয়ার ইচ্ছে হল। বাজার থেকে হরিণের মাংস নিয়ে এসে, রাঁধতে বলল পুত্রবধূকে।
পাকঘরে রান্না শেষ হতে, বৌমা কাজের মেয়েটিকে মাংস কেমন হয়েছে একটু চাখতে দিল। সে বলল, “ ঠিক বুঝতে পারলুম না, আর একটু দাও...”
এভাবে চাখতে চাখতে সব মাংস গেল শেষ হয়ে! তখন বৌয়ের মাথায় হাত! সে কাজের মেয়েটিকে বলল, “সব মাংস খেয়ে ফেললি, এবার শ্বশুরমশাইকে আমি কী খেতে দেব! যেখান থেকে পারিস মাংস কিনে আন”
ঝি ছুটল মাংস কিনতে। তখন বেলা দুপুর। অনেক খুঁজেও কোথাও মাংস পেল না। শেষে বাড়ি ফেরার পথে দেখল বাগানে একটা মরা বাছুর পড়ে রয়েছে। তার থেকে কিছুটা মাংস কেটে সে বউয়ের কাছে নিয়ে গেল।
বউ কুটে, ধুয়ে ফের মাংস রাঁধতে বসল। কিন্তু মাংস আর কিছুতে সিদ্ধ হয় না। তখন সে মেয়েটিকে ডেকে জিজ্ঞেস করল কী মাংস এনেছিস, এ মাংস সিদ্ধ হয় না কেন?
সে ভয়ে রা কাড়ে না। এদিকে বেলা বয়ে যায়। মধ্যাহ্ন ভোজনের সময় হয়ে আসে। ব্রাহ্মণ এসে বৌমাকে জিজ্ঞেস করল, “বৌমা, রান্না হল?” পুত্রবধূ উত্তর দেয়, ‘এই হয়ে এল বাবা…’
প্রহর যত এগোয় বৌ ভয়ে কাঁটা হয়ে যায়। শেষে অনেক ভেবে সে একটা ফন্দি বের করল। সে ঝিকে ডেকে বলল, তুই রান্নাঘরে তেল আর জল ঢালবি। আমি পিছলে পড়ে যাব। তখন তুই আমার মাথায় ঘড়ায় করে জল ঢালবি। তখন খাবারে জল লেগে সব খাবার নষ্ট হয়ে যাবে।
ঝি সত্যি সত্যিই তাই করল। দুম করে শব্দ হল। বাড়ির সবাই ছুটে এল হেঁশেলে। ঝি এমন জল ছিটল যে সব খাবার নষ্ট হয়ে গেল জল লেগে। সেদিন বাড়িতে আর কারুর খাওয়া হল না।
পরে বৌ তার স্বামীকে সব বলল। সে বৌকা জিজ্ঞাসা করল কোথা থেকে মাংস এনেছে। তখন ডাক পড়ল সেই কাজের মেয়ের।সে তখন আর কী করে! ব্রাহ্মণপুত্রকে বাগানে নিয়ে গিয়ে মরা বাছুরটিকে দেখাল। ব্রাহ্মণপুত্র তো খুব অবাক!
সে ফিরে এসে নিজের স্ত্রীকে সব জানাল। দাসীর উপর খুব রেগে গেল সে। কিন্তু রেগেও উপায় নেই বুঝে পাপ থেকে উদ্ধারের পথ খুঁজতে লাগল।
সেই দিন ছিল অগ্রহায়ণ মাসের ষষ্ঠী। বৌমা মূলা, কলা, পান, তেল, হলুদ দিয়ে মা ষষ্ঠীর পুজো করল। তারপর সেই পুজোর ফুল মরা বাছুরের উপর দিল। অমনি অবাক কান্ড! মরা বাছুর আবার বেঁচে উঠল! সেই কথা সবাই জানতে করে ধন্য ধন্য করল বউকে। ব্রাহ্মণও জানতে পেরে খুব খুশি।
তারপর বৌমা খুব ধুমধাম করে মা ষষ্ঠীর পুজো করল। সবাইকে বলল, অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লা ষষ্ঠীর দিন যে মাছ-মাংস খাবে তার গো-মাংস খাবার পাপ হবে।
সেই দিন মা ষষ্ঠীর পুজো করে মূলার তরকারী মুখে দিতে হবে, তারপর অন্য কিছু খাওয়া যাবে। সেই থেকে এই ব্রত মূলাষষ্ঠীর ব্রত নামে পরিচিতি পেল।