উমারিয়া। মধ্যপ্রদেশের এই গ্রামটি বিখ্যাত ফসিল পার্কের জন্য। ঘুঘুয়া আর উমারিয়া এই দুই গ্রাম নিয়ে ২৭ কিলোমিটার লম্বা জায়গা জুড়ে তৈরি হয়েছে জীবাশ্ম উদ্যান। সরকার স্বীকৃতিও দিয়েছে। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা। ৪২ এলাকায় জঙ্গল। ৮০ শতাংশ অধিবাসী উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ প্রান্তিক।
উমারিয়া গ্রামের তরুণ কালেক্টর স্বরচিস সোমাবংশী। গোটা দেশ যখন দাবদাহে পুড়ছে উমারিয়ার ছবিটাও খুব একটা আলাদা নয়। তরুণ এই আইপিএস অফিসার দেখতেন প্রচণ্ড গরমে পুড়তে পুড়তে ছোট ছোট বাচ্চারা স্কুল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাচ্ছে। বেশিরভাই ছেলে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় তাদের গায়ে গরম লোহার দাগ। দগদগে ক্ষত নিয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে তারা চিকিৎসার জন্য যাচ্ছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। প্রথম দিকে স্বরচিস ভাবতেন বাচ্চাদের অভিভাবকরা বোধহয় তাদের শাসন করার জন্য এভাবে গরম লোহার শিক দিয়ে ছ্যাঁকা দিয়েছে। কারুর ক্ষত এতটাই ভয়াবহ যে তাদের হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করছে হয়েছে।
দিনের পর দিন এসব দেখার পর স্বরচিস আর থাকতে পারলেন না। কথা বললেন ওই সব শিশুদের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে। জিজ্ঞাসা করেন কেন এভাবে শাসনের নামে বাচ্চাদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছেন তাঁরা। উত্তরে যা সামনে এল তাতে কার্যত হাড়হিম হয়ে যায় তাঁর। জানতে পারেন ‘দাগনা’ প্রথার কথা। ছ’বছর বয়স হতেই উমারিয়া গ্রামে শিশুদের গায়ে জ্বলন্ত লোহার শিক দিয়ে দাগ দিয়ে দেওয়া হয়।
‘দাগনা’ নামে এই প্রথা বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে। গ্রামের পুরুষ সদস্যরা পিঠের জামা সরিয়ে স্বরচিসকে দেখান তাদের গায়ের দাগ। জানিয়ে দেন নিজেদের প্রথাকে তারা কোনভাবেই বন্ধ করবেন না।
প্রচণ্ড গরম পোড়ার যন্ত্রণাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল। আরও উপায় না দেখে স্বরচিস নিজের অফিসের ৪টি এসি খুলে শিশু হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে দিয়ে দেন। তাঁকে দেখে উৎসাহিত হয়ে এগিয়ে আসেন আরও অনেকে। তাঁর অফিসের অন্যান্য কর্মী এবং আধিকারিকরা নিজেদের একমাসের বেতন দান করেন হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের এসি’র জন্য। ৫ লক্ষ টাকা অনুদান সংগ্রহ করা হয় ওই শিশুদের জন্য।
হাল না ছেড়ে তরুণ কালেক্টর উমারিয়া ও সংলগ্ন গ্রামে শুরু করেন সচেতনতা প্রোগ্রাম। ‘দাগনা’ কেন বন্ধ করা দরকার তাই নিয়ে শুরু হয় ক্যাম্পেনিং। ‘ সঞ্জীবনী’ নামে একটি কর্মসূচি নেন তিনি।
এখন ‘দাগনা’র ঘটনা ঘটলেই সেই পরিবারের সদস্যদের নামে এফআইআর দায়ের করা হচ্ছে। পাশাপাশি অপুষ্টিতে ভোগা শিশুরা যাতে অবশ্যই নিউট্রিশন রিহ্যাবিলিয়েশন সেন্টারে যায় তার জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এই প্রকল্পের ভিত্তিতে। এখনও পর্যন্ত ৫০,০০০ শিশুকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬৭৩ জন দাগনা’র শিকার।
শুরুতে গ্রামবাসীরা যতটা অনড় ছিলেন এখন সেই ছবিটা খানিকটা বদলেছে। ‘দাগনা’ পুরোপুরি বন্ধ না করা গেলেও হার কমেছে অনেকটাই। কালেক্টর স্বরচিস সোমাবংশীর এই উদ্যোগে অনেক শিশুদের পরিবারের সদস্যরাই এখন নিজে থেকে তাদের নিউট্রিশন রিহ্যাবিলিয়েশন সেন্টারে পাঠাচ্ছেন।