ছবির নাম: দৃষ্টিকোন
কাহিনী, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়
অভিনয়ে: প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্না সেনগুপ্ত, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, চুর্নী গঙ্গোপাধ্যায়, দোলন রায়, সোহোম মজুমদার ।
সঙ্গীত: অনুপম রায়
আবহ সঙ্গীত: রাজা নারায়ন দেব
চিত্রগ্রহণ: গোপী ভগৎ
প্রযোজনা: সুরিন্দর ফিল্মস প্রাইভেট লিমিটেড
রেটিং: ৪.৫/৫
চোদ্দ বছরের মান অভিমান পেরিয়ে 'প্রাক্তন'এ তারা আলোড়ন ফেলেছিলেন । আর তার দুবছর পর বিস্ফোরন ঘটালেন সেই জুটি । জুটির নাম প্রসেনজিৎ -ঋতুপর্না।সুরিন্দর ফিল্মসের পঞ্চাশতম ছবি আর এই জুটির আটচল্লিশ তম ছবি এবং এই জুটির প্রথম কাজ কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে । সব মিলিয়ে আলাদা কিছু যে দর্শক পেতে চলেছে সেটা আগে থেকেই বোঝা গিয়েছিল । কিন্ত সেটা যে এতটা প্রাপ্তি ঘটবে সেটা হয়তো অনেকেই আশা করেননি ।হলফ করে বলা যায় এখন পর্যন্ত প্রসেনজিৎ -ঋতু জুটির সেরা ছবি ।কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় সেই জুটিকে এত সুন্দর ভাবে ব্যবহার করবেন সেটা আগে হয়ত কেউ ভাবেননি । আর এই জুটিও তাদের চেনা ছক ভেঙ্গে এক অন্য ভূমিকায় ।এ ছবি প্রেমের গল্প । আপাত দৃষ্টিতে সেটা পরকীয়াও মনে হতে পারে । তবে পরকীয়াও বলা যায় কিনা সেটাও ধন্ধের । এ প্রেম ধোঁয়াসায় ঘেরা । সঙ্গে আছে থ্রিলার । সেই থ্রিলারেও আছে প্রতি মুহূর্তে মোচড় ।জীয়ন মিত্র(প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়)ও শ্রীমতি সেন (ঋতুপর্না সেনগুপ্ত ) কে নিয়ে কাহিনী আবর্তিত । জীয়ন পেশায় উকিল । যার দুটো চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল যদিও অপারেশান করে একটা চোখ ফিরে পেলেও বাঁ চোখটা সম্পূর্ন বিকল । এহেন উকিলের কাছে স্বামী পলাশ সেনের(কৌশিক সেন) মৃত্যুর রহস্যভেদ করতে হাজির হন শ্রীমতি । কিন্তু উকিল মক্কেলের সম্পর্ক অন্য দিকে মোড় নিয়ে পারিবারিক চৌহদ্দির আঙ্গিনায় ঢুকে পড়ে । জীয়নের স্ত্রী রুমকি(চুর্নী )যিনি একটা সময় উকিল থাকলেও এখন পুরোদস্তুর গৃহবধূ -তিনি জীয়ন -শ্রীমতির সম্পর্ক মেনে নিতে পারে না । সংসারে ওঠে ঝড় । এদিকে পলাশ সেনের দাদা শ্রীমতির ভাসুর প্রিতম সেন (কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় )
হাফ প্যারালাইসড হয়ে বাড়িতেই গৃহবন্দী । জীয়ন-শ্রীমতি-রুমকির সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেবে , পলাশ সেনের মৃত্যু রহস্য কিভাবে উদঘাটন ঘটে তা এখানে মোটেই বলা যাবে না -তার জন্য প্রেক্ষাগৃহে ঢুঁ মারতেই হবে কারন চিত্রনাট্যর প্রতি খোলোসেই আছে মোচড় । এত সুন্দর একটা কাহিনী এবং তার এত নিপুন বুনট চিত্রনাট্য তা একমাত্র কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছেই আশা করা যায় ।প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে আবার নতুন রূপে পাওয়া গেল অনেকটাই। টলিউডের সম্রাটের আর প্রমান করার কিছু নেই তবুও তিনি নিজেকে প্রতিনিয়ত ভেঙ্গে চলেছেনএই ক্ষিদেটাই তো তাকে টলিউডের সম্রাট করেছে । জীয়ন মিত্রর চরিত্রটা তার মুকুটে আরেকটি পালক যোগ করলো । টলিউডের রানী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর মন ছুঁয়ে যাওয়া অভিনয় দর্শকের মনে গেঁথে থাকবে । স্বল্প পরিসরে কৌশিক সেন যথাযত । চুর্নীর চরিত্র অনুযায়ী যথাযত অভিনয় , দোলন রায় চরিত্র অনুযায়ী যথাযত । তবে আলাদা করে উল্লেখ করতেই হয় কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিনয় । 'বিসর্জন'এও তিনি দেখিয়েছেন তিনি কত বড় শক্তিশালী অভিনেতা -এবারও আরেকবার সেই শক্তিশালী অভিনেতার অভিনয়ের স্বাদ পেল দর্শক । অনুপম রায়ের সুরে গানগুলো তো ইতিমধ্যেই হিট । তার সুরে এই ছবির গান 'আমি কি খুব বিরক্ত করছি 'এখন তো মানুষের মুখে মুখে । রাজা নারায়ন দেবের আবহ সঙ্গীতও উল্লেখ্য । ব্যবসায়িক সাফল্যর পাশাপাশি 'দৃষ্টিকোন'এর জন্য কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ঝুলিতে আরেকবার জাতীয় পুরস্কার ঢোকে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই ।