“সেদিন সবে ঘুম থেকে উঠেছি, মৌয়ের ফোন। সকলের মহুয়াকে আমি মৌ বলে ডাকতাম। খুব ভারি গলায় আমাকে বলল, একবার আয় তো আমার বাড়িতে। গলা ওর ভার। বুঝলাম কাঁদছিল মেয়েটা। রীতিমতো ধমকের সুরেই আমাকে বলল, আসবি কিনা বল? আমিও ধমক হজম করে বললাম ‘আসছি’। ওর আবদার- আমার কাছে চিংড়ি মাছের মালাইকারি রান্না করা শিখবে। শেখালাম। দুজনে মিলে খেলাম।“...
স্মৃতিগুলি আওড়েছিলেন রত্না ঘোষাল। দুজনে ছিলেন অভিন্নহৃদয় বন্ধু। শুধু ইন্ডাস্ট্রি কেন, সিনেপ্রেমী সকল মানুষই জানেন তাঁদের বন্ধুত্বের কথা। একে অপরকে না দেখে থাকতে পারতেন না তাঁরা। অভিনয়চর্চা থেকে শুরু করে রান্নাবান্না সবেতেই দুজনের মতামতের গুরুত্ব দিতেন দুজনে। রত্না ঘোষালের হাতের যে কোনও রান্না খেতে ভালবাসতেন মহুয়া।
রত্না ঘোষালের সঙ্গে একবার এক সাক্ষাৎকার পর্বে উঠে আসে মহুয়া রায়চৌধুরীকে ঘিরে তাঁর হাজার স্মৃতিকথা। তারই কিছু অংশ এই কলমে।
স্মৃতির আঙিনায় পাড়ি দিয়ে রত্না ঘোষাল জানান- “মৌয়ের অভিনয়জীবন নিয়ে সকলেই জানেন। কিন্তু ওর খাদ্যরসিকতা নিয়ে কেউ কি জানেন কিছু? মৌ খুব ভোজনরসিক ছিল। ফুচকা আর ঝালমুড়ি খাওয়ার কত যে স্মৃতি ওকে ঘিরে রয়েছে তা বলে শেষ করা মুশকিল। আমার বসন্ত রায় রোডের বাড়ির ঠিক বিপরীতে একজন ফুচকা নিয়ে বসত। তাঁকে ঘরে ডেকে এনে ফুচকা খেতাম আমরা। কী ভীষণ ঝাল খেতে পারত মেয়েটা! মৌ আমার বাড়িতে ঘন ঘন আসত। খুব মুডি ছিল মেয়েটা। যেমন অভিনয়জীবনে তেমনি ব্যক্তিগতজীবনে। কোনওদিন চাইনিজ খাবে মনে করলে সেদিন ওকে খেতেই হত। আর সঙ্গী? আর কে আমি ছাড়া? মহুয়া তখন রীতিমতো স্টার। সবাই ওর দিকে তাকিয়ে থাকত। ওর সেসব দিকে খেয়াল থাকত না। খাবার নিয়ে ব্যস্ত থাকত।”
প্রসঙ্গত, ইন্ডাস্ট্রির প্রায় অনেকেই জানেন, রত্না ঘোষালের বাড়ি থেকে কেউ কিছু মুখে না দিয়ে ফেরেন না। নিদেনপক্ষে লুচি-আলুর দম তো তিনি খাওয়াবেনই। মহুয়া রায়চৌধুরীর হাতের আলুর দম নাকি তিনি দারুণ ভালবাসতেন। আর তাঁর সই মহুয়া ভালবাসতেন তাঁর হাতের ভাপা ইলিশ। প্রায়ই নাকি তিনি রত্না ঘোষালকে ফোন করে বলতেন- “আজ আমার জন্য একটু ইলিশ ভাপা করিস তো।“ আর রত্নাও কোমর বেঁধে নেমে পড়তেন তাঁর প্রাণসখী মৌয়ের জন্য ইলিশ ভাপা বানাতে।
“মৌ মূলত ভেতো আর মেছো বাঙালি ছিল। বেশি ভাত খেতে বারণ করতাম আমি। কে কার কথা শোনে? আর ভালবাসত রাম খেতে। সন্ধে গড়ালেই রাম নাম জপত মৌ। আর সেই রাম নামই শেষ করে দিল মেয়েটাকে। আজও ভাল কিছু রান্না করলে মৌয়ের কথা মনে পড়ে। বন্ধু হলেও ওকে নিজের বোনই ভাবতাম আমি।”