গরমের ছুটি হোক বা উইন্টার ভ্যাকেশন, বাইরে ঘুরতে যাওয়া চাই-ই চাই| কিন্তু গাড়িতে উঠলেই বিপত্তি? গাড়ি চলা শুরুর সাথে তাল মিলিয়ে বমিভাব, গা গোলানো শুরু? তাহলে সহজ ভাষায় যাকে বলা হয় মোশন সিকনেস, সেই কবলে পড়েছেন আপনি|মোশন সিকনেস এমন একটি রোগ যেখানে গাড়িতে চড়লে বিশেষ করে কার ট্রেন এরোপ্লেন বা নৌকা প্রভৃতি যানবাহনে উঠলে শরীর খারাপ হতে পারে| সব ধরনের মানুষেরই এই ধরনের রোগ হতে পারে| তবে এই জিনিসটি বেশি পরিলক্ষিত হয় শিশু, গর্ভবতী মহিলা বা সেইসব মানুষের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায় যারা বিশেষ কোনো ধরনের ওষুধ খাচ্ছেন| মোশন সিকনেসের অ্যাটাক হলে হঠাৎ একধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়| মুহুর্তের মধ্যে কোল্ড সোয়েট অর্থাৎ ঠান্ডা ঘাম হওয়ার সাথে সাথে নাউসিয়া ও ভোমিটিং এর সমস্যা দেখা দিতে থাকে|
মানুষের মস্তিষ্ক অন্তঃকর্ণ, মাসল, নানা জয়েন্ট প্রভৃতি থেকে সোজাসুজি সিগনাল যায় মস্তিষ্কে| আর ঠিক যেই মুহুর্তে সিগনালগুলি পরস্পরের সাথে ম্যাচ করেনা সেই মুহুর্তেই মোশন সিকনেস শুরু হয়| উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, ধরুন আপনি বাসে যেতে যেতে ফোনে কিছু পড়ছেন, সেইক্ষেত্রে আপনার চোখ এমন একটি জিনিসের উপর ফোকাস করে আছে যেই জিনিসটি তখন নড়াচড়া করছে না| চোখ দেখছে জিনিসটি নড়ছে না কিন্তু আপনার অন্তঃকর্ণ ভালই টের পাচ্ছে যে আপনি চলমান কিছুতে রয়েছেন| এই ক্ষেত্রে আপনি কোন জায়গায় বসেছেন সেটাও ম্যাটার করে| ধরুন আপনি গাড়ির সামনের সিটে বসে আছেন, অথবা প্লেন যেইদিকে যাচ্ছে সেইদিকের কোনো সিটে বা মুকার উপরের ডেকে বসেন তাহলে খেয়াল করবেন মোশন সিকনেসের সমস্যা অতটা তীব্রতর হয় না| যানবাহনে যাত্রার সময় বই বা অন্যকিছু পড়ার জায়গায় যদি বাইরের দৃশ্য উপভোগ করতে করতে যাওয়া যায় সেক্ষেত্রে অসুবিধা হয় না|
গাড়িঘোড়ায় চড়লে যখন মাথা ঝিমঝিম করে, বমি পায় তাকে যে মোশন সিকনেস বলা হয় তা সকলেরই জানা| কিন্তু এই অনুভূতিটি কোনো রোগের কারণে হয় না| যদিও এর মধ্যে সিকনেস কথাটি রয়েছে| তবুও বলা বাহুল্য এটি সাধারণত কোনো রোগ নয়| এটি একপ্রকার অনুভূতি মাত্র| যেসব কারণে মোশন সিকনেস হতে পারে সেগুলি হলো,
১) যানবাহনের দোলনের ফলে এই অসুবিধাটি পরিলক্ষিত হতে পারে| যেমন, ভাঙ্গা রাস্তায় গাড়ি চলাচলের সময় বা নদীপথে জাহাজ বা নৌকা চলাচলের সময় যে দুলুনি অনুভূত হয় তার থেকেই মোশন সিকনেস হতে পারে|
২) যানবাহনে চড়ার আগে গুরুপাক খাবার খেলেও যানবাহন চলার সময় মোশন সিকনেসের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।এছাড়াও খাবারের বাজে স্মেলের কথা যাত্রাপথে মনে পড়লেও গা গোলানোর সমস্যা হতে পারে|
৩) হজমের সমস্যা থেকেও মোশন সিকনেসের সমস্যা দেখা দিতে পারে| এছাড়াও কারোর যদি গ্যাস্ট্রিক থাকে তার ক্ষেত্রেও মোশন সিকনেসে ভোগার সম্ভাবনা থাকে প্রবল|
৪) শরীরে ক্লান্তি অনুভূত হলে বা আগের দিন ঠিকঠাক ঘুম না হলেও যাত্রাপথে শরীর খারাপ লাগতে পারে যা ধীরে ধীরে মোশন সিকনেসের রূপ নেয়|
এই সমস্যা অনেকেরই সমস্যা আর এই সমস্যা হলে গাড়ি করে কোথাও যাওয়ার কথায় একধরনের ভীতি তৈরী হয়| তখন সেইসব মানুষ ঘুরতে যাওয়া থেকেও বিরূপ হয়ে যান| কিন্তু রাস্তাঘাটে যাদের রোজ বেরোতে হয় এবং এই সমস্যার সম্মুখীন যারা প্রায় প্রতিদিনই হন তাদের কি কি করা উচিত সেই নিয়ে আজ আলোচনা করা যাক|
১) প্রথমেই বলা ভালো, অত্যধিক বেশি খাবার খেয়ে গাড়িতে উঠবেন না| গাড়ির মধ্যে অনেক মানুষ থাকেন সেই ক্ষেত্রে সাফোকেশন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে| এছাড়াও হজমের গন্ডগোল থেকে মোশন সিকনেসের সমস্যা তৈরী হতে পারে| তাই অল্প পরিমান খাবার হেয়ে গাড়িতে উঠলে এই সমস্যা কম হয়|
২) গাড়ির মধ্যে সবসময় গতির অভিমুখে বসা উচিত| গাড়িতে গতির উল্টোদিকে বসলে মোশন সিকনেসের সমস্যা তীব্রতর হতে পারে| এছাড়াও গাড়ির পিছনের দিকের সিটগুলি বেশি ঝাঁকুনির সম্মুখীন হয় তাই মোশন সিকনেসের অসুবিধা থাকলে গাড়ির পিছন দিকের সিটে যত কম বসা যায় সেই চেষ্টাই করুন|
৩) যাত্রাপথে বারবার খাবার খাবেন না| যদি মুখ চালাতে ইচ্ছে হয় তাহলে অল্প খাবার যেমন বিস্কিট বা সেরকম জাতীয় কোনো খাবার খেতে পারেন তবে ভাজাভুজি, তেলমশলা প্রভৃতি যাত্রাপথে না খাওয়াই ভালো|
৪) গাড়িতে বসে বই পড়া বা মোবাইল ঘাঁটা থেকে বিরত থাকুন|
৫) ভ্রমনের সময় মন ভালো রাখার চেষ্টা করুন| দরকার পড়লে গান শুনুন, সাথে যারা রয়েছেন তাদের সাথে গল্প করুন|
৬) বাসে বা ট্রেনে যাত্রার সময় যদি দেখেন কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছে এবং বমি করছে তাহলে তার দিকে না তাকানোই ভালো কারণ অন্য কাউকে বমি করতে দেখলে কিন্তু বমি পায়|
৭) বাজারে বমি রোধ করার জন্য ট্যাবলেট পাওয়া যায়| দরকার অনুযায়ী সেই ট্যাবলেট সাথে রাখুন|
৮) অনেক ক্ষেত্রে অন্তঃকর্ণের সমস্যা থেকে মোশন সিকনেসের সমস্যা হতে পারে সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন|
মোশন সিকনেসের শিকার অনেকেই হয়ে থাকেন| কিছু ক্ষেত্রে এই জিনিসটি নিজেই একজনের জীবন থেকে বিদায় নেয় আবার কিছু ক্ষেত্রে তা সারাজীবনের মত ঘাড়ে চেপে বসে থাকে| যদি এই অসুবিধা নিজেই কমে যায় তাহলে তো কোনো কথাই নেই| কিন্তু যদি না কমে তাহলে উপরোক্ত পদ্ধতিগুলি অবলম্বন করে দেখতে পারেন|