বাসন্তী দুর্গা থেকে রাজ রাজেশ্বরী, বসন্ত হল মাতৃ আরাধনার ঋতু

বসন্ত হল শিব আরাধনার ঋতু, ত্যাগ ও তিতীক্ষার সময়। তবে সময়টায় কেবল ভৈরব নন, ভৈরবের ভৈরবীও পুজো পান। মাঘের শেষ থেকে ফাল্গুন-চৈত্র; বাংলায় মাতৃ শক্তিও পূজিতা হন। পুজো পান বাসন্তী দুর্গা, অন্নপূর্ণ, গণেশ জননী, বিন্ধ্যবাসিনী, রাজ রাজেশ্বরী। প্রায় সকলেই দেবী দুর্গার রূপ। 

 

বসন্তে গ্রাম তথা পল্লী বাংলার অন্যতম সেরা উৎসব হল রাজ রাজেশ্বরী দুর্গোৎসব।

শীতের বিদায়লগ্নে পূজিত হন দেবী। একে প্রাক বসন্তের দুর্গাপুজো বলা যেতে পারে। উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গ সর্বত্র দেবী পুজো পান। আদপে রাজ রাজেশ্বরী হলেন দেবী দুর্গার ষোড়শী রূপ। দেবী শবাসনে বিরাজমানা। দেবী রাজ রাজেশ্বরী, গ্রামে দেবী দুর্গা হিসেবেই পূজিতা হয়ে আসছেন। কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির দেবী দুর্গার নামও কিন্তু রাজ রাজেশ্বরী।

 

যিনি দুর্গা, তিনি কার্তিকে তামসিক কালী, তিনিই হেমন্তে জগদ্ধাত্রী। আবার তিনিই হলেন দেবী বিন্ধ্যবাসিনী। কোথাও দেবী বিন্ধ্যবাসিনী দশভূজা আবার কোথাও অষ্টভূজা। বসন্তে তিনিও পুজো পান বাংলাজুড়ে। কংসকে কে বধিবে, তা জানিয়ে দেবী চলে যান বিন্ধ্যাচলে। তিনি বিন্ধ্যাচলেই অবস্থান করেন। পুরাণ মতে, মহিষাসুর বধের জন্য দেবতাদের তেজ একত্রিত করে মা দুর্গা আবির্ভূতা হয়েছিলেন পর্বত শিখরেই। মহিষাসুরকে বধ করে দেবতাদের দেবী জানান, দুর্গা নামে দশভূজারূপে তিনি বিন্ধ্যাচলেই অবস্থান করবেন। এই বিন্ধ্যবাসিনী পুজোর মাধ্যমেই বাংলায় বারোয়ারি পুজো শুরু হয়েছিল। 

 

গুপ্তিপাড়ায় ১৭৫৮ সালে এক বিত্তবানের বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজোয় কয়েকজন মহিলা পুজো দেখতে গিয়ে ঢুকতে পারেননি। দারোয়ানের কাছে অপমানিত হয়ে ফিরে আসেন। তাঁদের পরিবারের পুরুষরা স্থির করেন নিজেরাই জগদ্ধাত্রী পুজো করবেন। সঙ্গতি না থাকায় তাঁরা বারোজন বন্ধু মিলে চাঁদা তুলে পুজো করেন। গুপ্তিপাড়ায় বারোজনের যৌথ উদ্যোগে পূজিতা জগদ্ধাত্রী দেবীই হলেন বিন্ধ্যবাসিনী। ১৭৫৯ সালে প্রথম বারোয়ারি আয়োজনে বিন্ধ্যবাসিনী পূজিতা হয়েছিলেন।

 

দেবী দুর্গার বড় আদরের সন্তান, গণেশ। তাই দেবীর আর এক নাম গণেশ জননী। বসন্তে বাংলায় দেবীর এই রূপেরও পুজো হয়। শান্তিপুরের সুবর্ণ বণিক, কংস বণিকেরা গণেশ জননীর পুজো করেন। দেবীর কোলে থাকে ছোট্ট গণেশ। গণেশকে বিবাহিতা মহিলারা কোলে নেন, এটাই এই পুজোর বিশেষ রীতি। সন্তান কামনার্থে এই রীতি পালন করা হয়।

 

এছাড়াও চৈত্রের শুক্লপক্ষে বাসন্তিকা অর্থাৎ দেবী বাসন্তী দুর্গার পুজো হয়। তিনিই আদপে বাঙালির প্রকৃত দুর্গা। শুক্লপক্ষের অষ্টমীতে পুজো পান দেবী অন্নপূর্ণা। মাধুকরীর পাত্র হাতে ভিক্ষা নেন শিব, সন্তান সন্ততি দুধে ভাতে সেই প্রার্থনা থাকে। মায়ের কাছেই এমন কাতর প্রার্থনা করা যায়। এ কারণেই বলতে হয় বসন্ত হল মাতৃ আরাধনার ঋতু।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...