শহরে প্রায়ই শোনা যায় নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ/বৃদ্ধা, দম্পতি হেনস্থা হয়েছেন নয়তো একেবারেই কারোর রোষে পড়ে প্রাণ খুইয়েছেন। সাম্প্রতিক এহেন ঘটনার পুনরাবৃত্তি কলকাতা পুলিশকে নড়ে চড়ে বসতে বাধ্য করেছে। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন বেশ কিছুদিন আগে শহরের এমন বয়স্ক মানুষদের সাহায্যার্থে কলকাতা পুলিশ একটি সমাজসেবী সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে 'প্রণাম' নামে একটি প্রকল্প চালু করে। ওই প্রকল্প অনুসারে নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা বিপদে পড়লে যাতে পুলিশের সাহায্য পান, সেই কারণে একটি হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে। সেই নম্বরে ফোন করে প্রবীণ নাগরিকরা সাহায্য চাইতে পারেন। এই নম্বরটি দিন-রাত খোলা থাকে। কিন্তু অনেকেই হয়ত এই ব্যাপারে কিছুই জানেন না।
তাই 'প্রণাম' ব্যবস্থাকে পুনরায় ঢেলে সাজাতে এবং পাশাপাশি 'স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর' বা 'এসওপি' চালু করার সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পুলিশ। বুধবার ৩১শে জুলাই নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন প্রকাশ করলে লালবাজারের পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা সেখানকার সব ডিসি, যুগ্ম কমিশনার এবং অতিরিক্ত কমিশনারদের নিয়ে একটি জরুরি বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে 'প্রণাম'-কে কী করে আরও সক্রিয় করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তার পাশাপাশি যে সমস্ত প্রবীণ নাগরিকেরা এখনও 'প্রণাম'-এ নিজেদের নথিভুক্ত করেননি, তাঁদের কিভাবে এই প্রকল্পে যুক্ত করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। কলকাতা পুলিশের সদ্য চালু হওয়া 'স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর'-এ বলা হয়েছে, শহরের নিঃসঙ্গ প্রবীণ নাগরিকদের নিয়ে একটি ডেটাবেস বা তথ্যভান্ডার তৈরী করা হবে। সেই ডেটাবেসে সংশ্লিষ্ট বৃদ্ধ বা বৃদ্ধার চিকিৎসক, পরিচারিকা, আত্মীয়দের পাশাপাশি কাঠমিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রি সহ অন্যান্য সমস্ত কাজে সাহায্যকারী ব্যক্তিদের যোগাযোগ নম্বর থাকবে।
এই সঙ্গে কলকাতা পুলিশের এসওপি তে আরও বলা হয়েছে, নিঃসঙ্গ প্রবীণ নাগরিকদের বাড়িতে কোনও মিস্ত্রি বাড়ি সংস্কারের কাজ করলে সংশ্লিষ্ট থানার বিট অফিসার সেখানে নজরদারি চালাবেন। লালবাজারের সূত্র থেকে জানা গেছে, এই বিট অফিসারদের অধীনে একজন করে কনস্টেবল থাকবেন। তিনি প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার করে ফোনে ওই প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলবেন। ১৫ দিনে একবার ওনাদের সঙ্গে সামনাসামনি দেখা করবেন। এই 'এসওপি'-র আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, কলকাতা পুলিশ শহরের নিঃসঙ্গ প্রবীণদের 'সিকিউরিটি অডিট' চালু করতে চলেছে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে শহরের থানাগুলি তাদের এলাকায় বসবাসকারী নিঃসঙ্গ প্রবীণদের বাড়ির প্রবেশপথে গ্রিলের দরজা আছে কি না, সিসি টিভি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে। যদি এগুলো তাঁদের বাড়িতে না থাকে, তাহলে সেই সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হবে কলকাতা পুলিশ। এদিকে বিদেশী 'নেবারহুড পুলিশিং'-এর ধাঁচে কলকাতা শহরের প্রবীণদের দেখাশোনার পাশাপাশি তাঁদের বাড়িতে কারা আসছে, সেই বিষয়ে খেয়াল রাখতে সংশ্লিষ্ট প্রবীণদের প্রতিবেশীদের বলা হবে।
এইভাবে বিভিন্ন উপায় বের করে শহরের প্রবীণদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর হয়েছে কলকাতা পুলিশ। তাই আশা করা যায়, ভবিষ্যতে প্রবীণদের বেঘোরে প্রাণ দিতে হবেনা।