বাংলা মাসের ক্রমবিভাগ

আর একটা দিন পরেই শুরু হচ্ছে বাংলার একটা নতুন বছর| পয়লা বৈশাখের হাত ধরে শুরু হতে চলেছে একটি নতুন বঙ্গাব্দের|সমগ্র বাঙালি জাতির ঐতিহ্য বহনকারী একটি দিন হলো এই পয়লা বৈশাখ| আর তার আগের দিন চৈত্র সংক্রান্তি| কিন্তু কিভাবে চালু হলো এই বাংলা বঙ্গাব্দ আর কিভাবেই বা নামকরণ হলো বাংলা মাসের চলুন জানা যাক.....

৫৫০ খ্রিষ্টাব্দের সমসাময়িক সময়ে বরাহমিহির পঞ্চসিদ্ধানতিকা’ নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন| গ্রন্থটি ছিল পাঁচটি খন্ডে বিভক্ত| জোতির্বিজ্ঞানের সংক্ষিপ্তসার এই গ্রন্থটিতে প্রাচীনকালের দিনকাল এবং মাস ও বছরের উল্লেখ পাওয়া যায়| এরই পর খলিফা আল মনসুর এই গ্রন্থটির আরবি ভাষায় অনুবাদ করার আদেশ দেন| সেখান থেকেই জানা যায়, প্রাচীনকালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সূর্যের বার্ষিক অবস্থান অনুযায়ী আকাশকে ১২টি ভাগে ভাগ করেন| প্রতিটি ভাগের নাম দেন রাশি| আর সূর্যের সম্পূর্ণ আবর্তন চক্রকে নাম দেওয়া হয় রাশিচক্র| সেই রাশিচক্র অনুযায়ী ১২টি রাশি হলো যথাক্রমে, বৃষ রাশি, মেষ রাশি, মিথুন রাশি, কর্কট রাশি, সিংহ রাশি, কন্যা রাশি, তুলা রাশি, ধনু রাশি, মকর রাশি, কুম্ভ রাশি ও মীন রাশি| জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, সূর্যের বার্ষিক অবস্থান অনুযায়ী সূর্য সবসময়েই কোনো না কোনো রাশির ঘরে থাকে| সূর্য যেদিন এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে যায় সেই দিনটিকে বলা হয় সংক্রান্তি| এই হিসেবে বাংলার এক একটি বছরে মোট ১২টি সংক্রান্তি পড়ে| আর এই সংক্রান্তিকে ধরা হয় মাসের শেষ দিন|

বাংলায় ১২টি রাশির পাশাপাশি রয়েছে ১২টি মাস| সেই ১২টি মাস হলো যথাক্রমে বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ন, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্র| কিভাবে নামকরণ হয়েছিল এই মাসগুলির? এই মাসগুলির নামকরণ হয়েছিল এক একটি নক্ষত্রের নামের থেকে| যেমন বিশাখা নক্ষত্রের থেকে বাংলার প্রথম মাসের নাম হয়েছিল বৈশাখ| সেরকমই জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রের থেকে দ্বিতীয় মাসের নামকরণ হয় জৈষ্ঠ্য| ধীরে ধীরে চাঁদের ২১ টি নক্ষত্রের বাকিগুলির অবস্থান দেখে বাকি মাস গুলির নামকরণ করা হয়| অষধা থেকে আষা‌‍ড়, শ্রবণা থেকে শ্রাবণ, ভদ্রা থেকে ভাদ্র, অশ্বিনী থেকে আশ্বিন, কৃত্তিকা থেকে কার্তিক, অগ্রহায়নী থেকে অগ্রহায়ন, পুষ্যা থেকে পৌষ, মঘা থেকে মাঘ, ফাল্গুনী থেকে ফাল্গুন এবং সর্বশেষে চিত্রা থেকে চৈত্র| চাঁদ যখন যেই নক্ষত্রের উপর অবস্থান করে সেই সময় সেই নক্ষত্রের প্রভাব বেশি থাকে পৃথিবীর উপর| তাই সেই সময়কালকে নক্ষত্রের নামের সাথে মিলিয়েই রাখা হয়েছে| আবার অগ্রহায়ন মাসে চাঁদ অগ্রহায়নী বা মৃগশিরা নক্ষত্রের উপর অবস্থান করে| এইসময় আকাশ বাতাস ধান পাকার গন্ধে ভরপুর হয়ে থাকে| তাই এই মাসকে অনেকে অঘ্রান মাসও বলে থাকে| আমরা জেনে নিলাম বাংলা মাসগুলোর ক্রমপর্যায় কিভাবে গঠিত হয়েছে। আসলে এখনকার গ্লোবালাইজেশনের যুগে আমরা বাঙালিরাই আমাদের ঐতিহ্যকে ভুলতে বসেছি। সেখানে যখন নতুন করে এই বিষয়গুলো আমরা জানি, তখন নিজেদের সংস্কৃতি তথা ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান করতে শিখি, যা অত্যন্ত প্রয়োজন।

 

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...