আজ মিত্র সপ্তমী। আগ্রহায়ণ মাসের শুক্ল পক্ষের সপ্তমী তিথিতে এই মিত্র সপ্তমী পালিত হয়। আজ সূর্যের দিন, একে সূর্য সপ্তমীতেও বলা হয়। এদিন সূর্য দেবের উপাসনা করা হয়। তাই এই উৎসব সূর্য নারায়ণ মিত্র নামেও পালিত হয়। এদিন ভাস্করের পুজো করা হয়। গঙ্গা ও যমুনার তীরে দাঁড়িয়ে সূর্যের উপাসনা করে তাকে জল উৎসর্গ করা হয়। বাংলায় মিত্রসপ্তমী ব্রত পালনের চল তুলনায় কম। যদিও সারা ভারতে এই ব্রত পালন করা হয়।
সূর্য আদপে বিষ্ণুরই আরেক রূপ। মৎস্য, ভবিষ্য, মার্কণ্ডেয় ইত্যাদি পুরাণে সূর্যের উদ্ভবের বিভিন্ন কাহিনী বর্ণনা করা রয়েছে। মার্কণ্ডেয় পুরাণ মতে, সৃষ্টি লগ্নে জগৎ ছিল আঁধারে ঢাকা। সেই সময় জগত স্রষ্টা পদ্মযোনি ব্রহ্মার আবির্ভাব। ব্রহ্মার মুখ নির্গত ওঁ থেকেই সূর্যের জন্ম। তা থেকে ভূ, ভুবঃ এবং স্বঃ উৎপত্তি যা সূর্যের স্বরূপ। ক্রমে মহঃ জন, তপঃ এবং সত্য রূপে তার বিকাশ ঘটল। সূর্যের প্রভাবে চারিদিকের সব জল যখন শুকিয়ে যেতে থাকল, তখন চিন্তায় পড়লেন ব্রহ্মা। জল ছাড়া তো সৃষ্টি অসম্ভব। সূর্যের তেজ সম্বরণের শুরু ব্রহ্মা প্রার্থনা করতে আরম্ভ করেন। ব্রহ্মার স্তবে তুষ্ট হলেন সূর্য, তেজ সম্ববরণ করলেন। ব্রহ্মা সৃষ্টি করতে আরম্ভ করলেন। এই সৃষ্টি পর্বেই ব্রহ্মার পৌত্র কশ্যপ প্রজাপতি দক্ষের সঙ্গে অদিতির বিয়ে হয়।
সুরেন্দ্রর স্বর্গের সিংহাসন হাতছাড়া হয়। দেবরাজ্য দখল করে অসুররা। স্বর্গ ছেড়ে পালান দেবতারা। দেবতাদের দুঃখে বিচলিত দেবমাতা অদিতি, সূর্যের আরাধনা শুরু করেন। তপস্যায় তুষ্ট সূর্যদেব, আবির্ভূত হন অদিতির সামনে। সূর্য অদিতির প্রার্থনা জানতে চাইলে, অদিতি বলেন, তার সন্তানরা স্বর্গহারা। তাদের স্বর্গ ফিরে পাওয়ার কাতর প্রার্থনা জানান। সূর্য বললেন তাই হবে। তিনিই অসুরদের বিতাড়িত করবেন। তিনি অদিতির সন্তান হয়ে আসবেন। সূর্যের বরে অদিতি গর্ভবতী হন। মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নিলেন সূর্য। পুত্রের নাম হল 'মার্তণ্ড'।
এই মার্তণ্ডই স্বর্গজয়ী অসুরদের বিনাশ করেন। দেবতারা কৃতজ্ঞতা স্বরূপ নানাভাবে সূর্যর আরাধনা শুরু করেন। সূর্য উপাসনার সূত্রপাত হয়েছিল এইভাবেই। উপাসনার এক সার্থক রূপ হল মিত্রসপ্তমী।
সূর্যের অসংখ্য নাম, এক এক মাসে, এক এক নামে সূর্য অবস্থান করেন। অগ্রহায়ণ মাসে সূর্যের অবস্থান মিত্র রূপে। সূর্যের প্রিয় তিথি শুক্লপক্ষের সপ্তমী, অগ্রহায়ণ মাসে যা মিত্র-সপ্তমী নামে পরিচিত। সারা দেশের অসংখ্য মানুষ এদিন সূর্য উপাসনা করে। পালন করেন মিত্র-সপ্তমী ব্রত। শুক্ল সপ্তমীর দিন সকালে সূর্যোদয়ের আগে, কোনও নদী বা জলাশয়ে স্নান করে সূর্যের পুজো করা হয়। নানারকম ফল-মিষ্টি এবং অন্যান্য দ্রব্য নিবেদন করা হয়। পরিবারের সকলে এই প্রার্থনায় অংশ নেয়। মিত্র সপ্তমীর দিন ফল, দুধ, সিঁদুর, বাদাম ইত্যাদি ভগবান সূর্যদেবের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। ব্রতীরা উপবাস করেন। উপবাসকালে ফল খান। অষ্টমীতে মিষ্টি খেয়ে ব্রত ভঙ্গ করা হয়। ব্রতীরা সম্পদ, সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু কামনায় এই ব্রত পালন করা হয়। ব্রতের অন্যতম অঙ্গ সূর্যস্নান। বলা হয়, এদিন দীর্ঘক্ষণ সূর্য রশ্মি ও তাপ গায়ে লাগানো অত্যন্ত পুণ্যের কাজ। মনে করা হয়, এতে শরীর ও মন হয় শুদ্ধ। প্রচলিত বিশ্বাস, এই ব্রত পালন করলে সমৃদ্ধি আসে এবং সম্পদ বৃদ্ধি পায়।