হাজারোঁ খোয়াইশে অ্যায়সে কি হর খোয়াইশ পে দম নিকলে
বহত নিকলে মেরে আরমান লেকিন ফিরভি কম নিকলে।
এই লাইনগুলির কাছে বারবার নতজানু হয়েছে সারা দুনিয়ার কবিতার পাঠক। নতজানু হয়েছে সেই কবির কাছে। মির্জার কাছে।
মির্জা গালিব ছিলেন উর্দু ভাষার সবচেয়ে প্রভাবশালী কবি। জন্ম ১৭৯৭ সালে আগ্রায় তাঁর জন্ম।
মুঘল রাজ দরবারের কবি ছিলেন তিনি। মির্জা গালিব মাত্র ২৩৪ টি গজল-কবিতা লিখেছিলেন। আর তাতেই তিনি হয়ে ওঠেন উর্দু কবিতার প্রাণপুরুষ। শুধু উপমহাদেশেই নয়, সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে তাঁর শের শায়েরি আর জীবনের খুসবু।
আমরা যে সকল প্রসিদ্ধ গজল শুনি, বেশিরভাগই গালিবের লেখা। জগজিৎ সিং, মেহেদি হাসান, মো. রফি, গোলাম আলী, আশা ভোঁসলে, লতা মঙ্গেশকর, আবিদা পারভিন, ফরিদা খাতুন, টিনা খান, বেগম আকতার, রাহাত ফাতেহ্ আলী খান প্রমুখ সকলের কণ্ঠেই গালিবের গজল। আর এভাবেই গালিবের গজল হয়ে উঠেছে আম জনতার। প্রেম-বিরহ-বিপ্লব-প্রতিবাদ কিংবা দিনশেষে একলা পথিকের ঘরে ফেরার গান সবেতেই আছেন গালিব।
গালিবের পিতামহ কউকান বেগ তুরস্ক থেকে যখন হিন্দুস্তানে আসেন তখন দিল্লির তখতে মুহাম্মদ শাহ। পিতামহ ছিলেন যোদ্ধা। পিতা আবদুল্লাহ বেগ খাঁ প্রথমে চাকরি নেন লখনউর নবাব আসফ-উদ-দৌলার অধীনে, পরে চলে যান হায়দরাবাদ। তৃতীয় চাকরি যখন করছেন আলওয়ারে সেখানে তিনি এক ছোট্ট জঙ্গে নিহত হন। গালিবের বয়স তখন পাঁচ। চাচা নসরুল্লাহ বেগ তাঁদের দায়িত্ব নেন।
মির্জা গালিব সাক্ষী ছিলেন ১৮৫৭ সালের উত্তাল সময়ের। মহাবিদ্রোহ ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল তাঁর জীবনে। ১৮২৮ সালেখুব অল্পসময়ের জন্য কলকাতা এসেছিলেন। কারণ ছিল ব্রিটিশ সরকারের কাছে বন্ধ হয়ে যাওয়া মাসিক ভাতা পুনরায় চালু করার দাবি জানাতে কলকাতায় আসতে হয় তাঁকে। তখন কলকাতা ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজধানী। স্বয়ং বড় লাট আমহার্স্ট সদর দফতর। প্রায় দেড় বছর কলকাতায় ছিলেন গালিব।
‘সফর-এ-কলকাত্তাহ্’-তে লিখছেন, শিমলা বাজারের কাছে ১৩৩ নং হাভেলিতে থাকতেন তিনি। যার বর্তমান ঠিকানা রামদুলাল সরকার স্ট্রিটে। নানাকারণে তাঁর কলকাতাবাসের অভিজ্ঞতা খুব সুখকর হয়নি। তবু ভালবেসেছিলেন কলকাতাকে। তিলোত্তমা শহর সম্পর্কে লিখেছিলেন
‘কলকাত্তেকা জো জিক্র কিয়া তুনে হম নশীঁ
এক তীর মেরে সীনে মে মারা কে হায় হায়।’
আর ভালোবেসেছিলেন বাংলার আমের স্বাদ।
তিনি ছিলেন মোগল যুগের শেষ ভাগে আগ্রায় জন্মানো সেই শতকের শ্রেষ্ঠ কবি। দিল্লির শেষ মুঘল দরবার তাঁকে ‘দরবার উল মালিক’ ও নাজিমই দৌলা’ উপাধি দেয়।
সাদত হাসান মান্টো লিখেছিলেন চিত্রনাট্য 'মির্জা গালিব'। মান্টোর জন্ম গালিবের মৃত্যুর ৪২ বছর পরে। সাদাত হাসান মান্টো উর্দু সাহিত্যের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র। সারা জীবন ধরে তিনি খোঁজ করেছিলেন একজন মানুষকেই। তিনি মির্জা গালিব।
২৭ ডিসেম্বর মির্জা আসাদুল্লা বেগ খানের জন্মদিন। তাঁকে গোটা দুনিয়া চেনে এক নামে। তিনি গালিব। মির্জা গালিব। ১৮৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তাঁর প্রয়াণ ঘটে।